X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

আমাদের প্রাপ্তির শ্বাস ও অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস

সেলিনা হোসেন
২৬ মার্চ ২০২১, ০০:৪০আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২১, ০০:৪০

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গেলে কেন জানি অপ্রাপ্তিই প্রথমে চোখে পড়ে। অপ্রাপ্তির যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় সেটি হলো সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। আমরা যেন এই অপক্ষয়টা কিছুতেই এড়াতে পাচ্ছি না। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন আমাদেরকে এমনভাবে জাগিয়ে রেখেছে যে ঘুমের ভেতর আমরা আঁতকে উঠছি। অথচ, কী আশ্চর্য এতে আমরা এতটুকু লজ্জিতও হচ্ছি না। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের জায়গাটা কেন তৈরি হবে না? জিজ্ঞাসাচিহ্নের মতো বারবার আমাকে বিচলিত করে। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। আমাদের দারিদ্র্য থাকতে পারে, অশিক্ষা থাকতে পারে, আমাদের সবকিছু পাওনা হয়তো পূর্ণ নাও হতে পারে, তাই বলে সামাজিক মূল্যবোধের জায়গাগুলো ব্যক্তি বিশেষে কেন পরিবর্তন হবে না। এই পঞ্চাশ বছরে যেটা হওয়া উচিত ছিল সেটা কিন্তু হয়নি। সরকার একটা আইন করেছে বটে কিন্তু সেটার প্রয়োগ কই? ধর্ষণ করলে মৃত্যুদণ্ড কিন্তু কই সেটা তো দেখছি না। একটাও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এখনো দেখতে পাইনি আমি। হয়েছে কী? কোনো পত্রিকায় তো আমি এমন খবর পাই না। আইন থাকলে মৃত্যুদণ্ড আদেশ কার্যকর হবে না কেন? এমন প্রশ্ন সবসময় মনে জাগে। আজও অনবরত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। নারী হিসেবে আমি খুব অসহায়বোধে ভুগি। আমি এই সামাজিক মূল্যবোধের জায়গার পরিবর্তনটা সবচেয়ে বড় করে দেখতে চাই। এটার একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন অনুভব করছি।

ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হয়েছি, আমাদের উন্নয়নের যাত্রা এগোচ্ছে। কিন্তু এই মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে আমরা কিছুতেই রক্ষা পাচ্ছি না, কেন? আমাদের বাল্যবিয়েটা একটু কমেছে, মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু আজকের পত্রিকায় দেখলাম (পত্রিকাটির নাম জাগরণ) অধিকাংশ মেয়েপথশিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

উন্নয়নের যাত্রায় আমাদের দারিদ্র্য কমছে, মানুষজন কাজের সুযোগ পাচ্ছে। কৃষিতে আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, কৃষকরা এগিয়ে আসছে। নারীদেরকে কৃষিক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি যেটা আমরা আগে দেখিনি। নারীদের এই অগ্রগতি ইতিবাচক হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। নারীরা কৃষিক্ষেত্রে কৃষকের মতো কাজ করছেন। উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বি জীবনযাপন গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। সেখানে পুরুষরা কেন সামাজিক এই মূল্যবোধের জায়গাগুলোকে নষ্ট করে নিজেরাই দোষী হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের এই ধৃষ্টতা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

সামাজিক মূল্যবোধ ও নারী-পুরুষের সমতার জায়গাটা তৈরি হবে এমনটি দেখতে চাই আমি। দীর্ঘ শতাব্দী ধরে নারীদেরকে অবমাননা করা হয়েছে। তাদের ইচ্ছেকে ধাবিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ অবস্থায় বন্দি রাখা হয়েছিল গৃহে। সেই জায়গা থেকে তাদেরকে কিছুটা মুক্ত করা হয়েছে এখন। পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে নারীদের। পড়াশোনায় এগিয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু সামাজিক এই জায়গাগুলোতে নারীরা কেন অবদমিত থাকবে? স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আমরা কিছুতেই এটা প্রত্যাশা করি না। আমার মনে হয় সরকারকে আরও বেশি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিতে হবে।

অন্যদিকে প্রাপ্তির জায়গাটাও কিন্তু আছে আমাদের। সেখান থেকে আমি বলব, আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটা গৌরব। আমাদের বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭ই মার্চের ভাষণ; ইউনেস্কোর উপদেষ্টা কমিটি দ্বারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ধরনের দলিলগুলোকে ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটাকে এই তালিকায় নেওয়া হয়েচে। বিশ্বজুড়ে এই ভাষণের অনুবাদ হচ্ছে, কোটি কোটি মানুষ সেটা পড়ছে, জানতে পাচ্ছে। কীভাবে এই ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল একজন রাজনৈতিক নেতা সাধারণ জনসাধারণকে। এই দুটো জায়গায় আমাদের বড় ধরনের অর্জন বলে আমি মনে করি। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটা বড় সাফল্য। আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধিটাও প্রশংসনীয়। বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ সড়কের ঘনত্ব, শিল্পায়ন, গৃহায়ণ, নগায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি ঘটেছে। এছাড়া সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও স্বস্তিদায়ক পরিসংখ্যন। যেমন : সার্বিক সাধারণ শিক্ষা, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, গড়আয়ু, ইপিআই, নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম ও মৃত্যু হার হ্রাস ইত্যাদিতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে এটা বলাই যায়। সরকারের মেগা প্রজেক্টের ভেতর দৃশ্যমান পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল উল্লেখযোগ্য। মোট কথা বিগত ৫০ বছরে আমাদের প্রাপ্তিটা একেবারে কম নয়। তবে আরও বেশি হতে পারত। এখন আমাদের দেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। ভবিষ্যতে কিছু কিছু জায়গায় আমাদেরকে আরও মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে সুশাসন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই দুটি ক্ষেত্র খুব শিগগির পুরোপুরি প্রস্তুত হবে এমনটিই প্রত্যাশা করি।

লেখক : কথাসাহিত্যিক

শ্রুতিলিখন : মিলন আশরাফ

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়