X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেতিবাচক: বিশেষজ্ঞ

বিদেশ ডেস্ক
১৬ মার্চ ২০২১, ১৯:৩৫আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২১, ১৯:৩৫
image

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণের পর হাতে গোনা কয়েকজন রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ ওঠাকে কেন্দ্র করে টিকাদান স্থগিত ঘোষণাকারী দেশের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এ দেশগুলোর বেশিরভাগই ইউরোপীয়। তারা স্বীকার করেছে যে এ ভ্যাকসিনই যে সমস্যার কারণ তার কোনও প্রমাণ নেই। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, কেবল তত্ত্বগত উদ্বেগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যথাযথ হয়নি। এই সিদ্ধান্তের কারণে ভালোর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হতে পারে।

টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে খুবই অল্প কিছু মানুষের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো কিছু সমস্যা দেখা গেলেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিতকারী দেশের সংখ্যা বাড়ছে। মঙ্গলবার সবশেষ সুইডেন করোনাভাইরাসের টিকা কর্মসূচি স্থগিত করেছে। এর আগে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, বুলগেরিয়া ও আইসল্যান্ড আগেই ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ স্থগিত করে। এদিকে কর্মসূচি শুরুর আগেই তা স্থগিত করেছে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও ইন্দোনেশিয়া। থাইল্যান্ডেও টিকা কর্মসূচি স্থগিত ছিল, মঙ্গলবার তা আবার তা শুরু হয়েছে।

সোমবার (১৫ মার্চ) জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্পাহন বলেন, ‌‘একেবারে পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আজ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ কেবল জার্মানি নয়, টিকা স্থগিতকারী দেশগুলোর কেউই ভ্যাকসিনের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা অন্য কোনও সমস্যার সম্পর্কের প্রমাণ দিতে পারেনি।  

ফিলাডেলফিয়ার শিশু হাসপাতালের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ পল অফিট ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, তত্ত্বগত উদ্বেগ থেকে মহামারির মাঝখানে কার্যকর ভ্যাকসিন বন্ধ করে দেওয়াটা বাজে সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘যে ভাইরাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা নিয়ে তত্ত্ব ফলানোর সুযোগ নেই।’ হুট করে ভ্যাকসিন স্থগিতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আদতে ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারটা রক্ষণশীল কোনও পছন্দ না, এটা র‍্যাডিক্যাল পছন্দেরই প্রশ্ন।

বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনগুলোর অন্যতম অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে কোভ্যাক্স জোট যেসব ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে তার একাংশ অ্যাস্ট্রাজেনেকা সরবরাহ করছে। ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উচ্চ ও নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে অসমতা দূর করাই এ জোটের লক্ষ্য। ৪০টিরও বেশি দেশ ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য হলো, মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ভ্যাকসিনের গুরুত্ব ও ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আসা। সামান্য হলেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

ডেনমার্কই প্রথম দেশ হিসেবে গত সপ্তাহে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থগিত করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের পর রক্ত জমাট বেঁধে ৬০ বছরের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ড্যানিশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভ্যাকসিন ও রক্ত জমাট বাঁধার মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা এখনই চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না।

ড্যানিশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান সোরেন ব্রোস্টম বলেন, ‘ভ্যাকসিনটি যে নিরাপদ ও কার্যকর তার ভালো প্রমাণ রয়েছে। তবে সম্ভাব্য গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আমরা এবং ড্যানিশ মেডিসিন্স এজেন্সি উভয়কেই প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে।’

ভ্যাকসিন নেওয়ার ১০ দিন পর রক্ত জমাট বেঁধে আরেক রোগীর মৃত্যুর পর ভ্যাকসিনটির একটি চালান স্থগিত করেছে অস্ট্রিয়া। আরও কয়েকটি দেশে এ ধরনের হাতে গোনা কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিসহ কয়েকটি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থগিত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ)-এর পর্যালোচনার অপেক্ষায় আছে তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান সোমবার (১৫ মার্চ) সাংবাদিকদের বলেন, ভ্যাকসিন নেননি এমন মানুষদের তুলনায় ভ্যাকসিন গ্রহণকারী মানুষদের মধ্যে যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা বেশি ঘটছে এমনটা নয়। মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধে এবং এ ধরনের ঘটনায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রশ্নটা হলো, ভ্যাকসিনের সঙ্গে আসলে এ ধরনের মৃত্যুর সংযোগ আছে কিনা তা দেখা।’

অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপ ও ব্রিটেনে যে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার হার কম।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক স্টিফেন ইভান্স বলেন, খোদ করোনাভাইরাসের কারণেই রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা এ সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বামীনাথান বলেন, বিশ্বজুড়ে ২৬ লাখেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে যে ৩০ কোটি মানুষ অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের কেউ ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে মারা যাননি। তিনি বলেন, ‘যে রোগটির কারণে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তার বিপরীতে মানুষকে কতটা সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে তার তুলনা করা।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিনটির পক্ষে সুপারিশ করে আসছে। ইএমএ-ও তাই করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইএমএ মঙ্গলবার আলামতগুলো বিবেচনা করতে বৈঠক করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে যে তাদের সুপারিশগুলো পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে কিনা। অফিট মনে করেন, তারা যদি এটা পুনরায় নিশ্চিতও করে যে ভ্যাকসিন নিরাপদ, তারপরো এর মধ্যে যতখানি ক্ষতি হয়ে গেছে তা পূরণ করা কঠিন। ‌‘আপনারা লোকজনকে আতঙ্কিত করেছেন। তাদের ভীতি দূর করাটা কঠিন হবে। কোনো তথ্য জনগণের মাঝে ছড়িয়ে যাওয়ার পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া কঠিন।’ বলেন অফিট।

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
করোনা শনাক্তের হার ৮ শতাংশ ছাড়ালো
দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ শনাক্ত
দ্রুত করোনার টিকা দেওয়ার নির্দেশ
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন