X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ

মশার ওষুধ কেনা সংক্রান্ত সেই চুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা

শাহেদ শফিক
০৯ মার্চ ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২১, ১৮:০৩

অনিয়মের অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মশার ওষুধ সরবরাহের একটি টেন্ডারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। ডিএনসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সর্বনিম্ন দরদাতাকে রেখে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে মশার ওষুধ সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ডিএনসিসির প্রায় সোয়া কোটি টাকা বেশি খরচ হয়।

বিষয়টি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি বাংলা ট্রিবিউনে 'সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ দামে মশার ওষুধ ক্রয়' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো এক পত্রে এই 'নিষেধাজ্ঞা' আরোপ করে সিপিটিইউ। সরকারি এ সংস্থার মহাপরিচালক মো. শোহেলের রহসান চৌধুরী (অতিরিক্ত সচিব) এই পত্র জারি করেন। পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি স্থানীয় সরকার সচিবকেও জানানো হয়।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার লিটার আর্ভিসাইডিং (টেমফোস-৫০ ইসি) ওষুধ সংগ্রহ করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে ডিএনসিসি। এতে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে প্রতি লিটার ওষুধের দাম এক হাজার ৬৯৪ দশমিক ৯৯৫ টাকা করে সর্বমোট এক কোটি ৬৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় এম আর এন্টারপ্রাইজ। এক হাজার ৭৭৭ দশমিক ০০১ টাকা করে সর্বমোট এককোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ১০ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল দ্য লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড। আর এক হাজার ৭৯০ দশমিক ৮০১ টাকা করে সর্বমোট এক কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ১০ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা (তৃতীয় অবস্থানে) হয় মেসার্স মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কার্যাদেশ পাওয়ার প্রথম তালিকায় থাকা এম আর এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ না দিয়ে তৃতীয় বা সর্বোচ্চ দরদাতা মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দ্য লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেডকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে করপোরেশনের কয়েক কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।

শুধু তায় নয়, ইজিপিতে আপিল করার যে কলাম রয়েছে সেই কলামও বন্ধ করে দেয় ডিএনসিসি। ডিএনসিসির এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে সিপিটিইর রিভিউ প্যানেল বরাবরে লিখিত আপিল করে এমআর এন্টারপ্রাইজ। যা গ্রহণ করে সিপিটিইউ।

সিপিটিইউর ওই জরুরি পত্রে বলা হয়েছে, উল্লেখিত এম আর এন্টারপ্রাইজ নামের দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর মো. মাহবুবুর রহমান গাজী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৫৮ অনুযায়ী গঠিত রিভিউ প্যানেল বরাবর প্রয়োজনীয় নিবন্ধন ফি এবং নিরাপত্তা জামানতসহ সিলগালাযুক্ত খামে আপিল আবেদন করেন। প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৫৮ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক গঠিত রিভিউ প্যানেল থেকে উল্লেখিত আপিলটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই বিধিমালার বিধি ৫৯ অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের নোটিশ (এনওএ) জারি করা হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।

সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ দুর্নীতির মাধ্যমে ডিএনসিসি এই টেন্ডারটি সম্পন্ন করেছে। নিজেদের স্বার্থের জন্যই জালিয়াতি করে প্রতিবার একই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে কোনও অনিয়ম হয়নি।

জানতে চাইলে এম আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ পেস্টিসাইড অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেজারার ড. মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে টেন্ডারের জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে আমরা সবগুলোই পূরণ করে দরপত্র জমা দিয়েছি। কী কারণে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে সেটাও জানানো হয়নি। ইজিপিতে অভিযোগ দেওয়ার একটা কলাম রয়েছে। যেখানে অভিযোগ বা কমেন্ট করলে তা মীমাংসা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই কলাম হাইড করে দেওয়া হয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে টেন্ডার কতো অস্বচ্ছতা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সিপিটিইউতে অভিযোগ দায়ের করি। কর্তৃপক্ষ আমার অভিযোগ গ্রহণ করে টেন্ডার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে ডিএনসিসিকে অনুরোধ করেন।

শুধু চলতি অর্থ বছরে নয়, তার আগের অর্থ বছরেও সর্বোচ্চ দর দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা মেসার্স মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে পাঁচ লাখ লিটার মশার ওষুধ ফর্মুলেশন করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে ডিএনসিসির প্রায় সোয়া কোটি টাকা বেশি খরচ হয়। ওই টেন্ডারে প্রতি লিটার ওষুধ ফর্মুলেশন করার জন্য নোকন লিমিটেড ১৬৪ টাকা করে মোট আট কোটি ২০ লাখ টাকা দর দিয়ে প্রথম স্থান অবস্থান করে। প্রতি লিটার ১৭২ টাকা করে সর্বমোট আট কোটি ৬০ লাখ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান করে দ্য লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড। আর প্রতিলিটার ১৮৯ টাকা করে সর্বমোট ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দর দেয় মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তবে এক কোটি ১২ লাখ টাকা বেশি দর দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ডিএনসিসির প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. সগীর হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া নেননি।

গত কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ দরে মার্শাল থেকে মশার ওষুধ ক্রয় ফর্মুলেশন করছে ডিএনসিসি। তবে এরই মধ্যে মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা জানিয়েছেন, বছরের যে কোনও সময় থেকে বর্তমানে নগরীতে চারগুণ বেশি মশা বেড়েছে।

/এফএস/
সম্পর্কিত
ধ্রুব এষ হাসপাতালে
কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদের সঙ্গে মেয়র তাপসের মতবিনিময়
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন