X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যের নামে ফেসবুক আইডি খুলছে কারা?

হিটলার এ. হালিম
০৯ মার্চ ২০২১, ১১:০০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২১, ১৮:০৩

ভয়ানক পরিণতি না জেনেই অন্যের নামে খোলা হচ্ছে ফেসবুক আইডি, বিভিন্ন পোস্টে করা হচ্ছে কমেন্ট।  সেই কমেন্ট কখনও বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে ফেলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হেয় হচ্ছেন অনেকের চোখে।  অথচ দেখা গেলো, যার নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তিনি আসলে কিছু জানেনই না।  সম্প্রতি এরকম অনেক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়াড়, বিনোদন অঙ্গনের সেলিব্রেটিদের নামে অসংখ্য আইডি ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে।  এসব আইডির কোনটা আসল, কোনটা ভুয়া বোঝার উপায় নেই।  সেইসব আইডি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির পোস্টে কমেন্ট করা হচ্ছে। এসব কমেন্ট নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। কারও ভুয়া আইডি থেকে এমন কিছু পোস্ট বা শেয়ার দেওয়া হচ্ছে যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে, ঘুরছে ফেসবুকের এ দেওয়াল থেকে ও দেওয়ালে।  বিব্রত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।  অথচ দেখা যায় ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিন্দুমাত্র সংশ্লেষ নেই তার।

গত কয়েকদিনে ফেসবুকে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা দেখা গেছে। একজন বিখ্যাত ব্যক্তির কথা জানা গেলো, তার নামে অন্তত ১৮ ফেসবুক আইডির সন্ধান পাওয়া গেছে।  সরকারের একাধিক মন্ত্রীর ফেসবুক আইডি থাকার কথা জানা গেছে অথচ প্রকৃত আইডি ও পেজের সংখ্যা মাত্র দুটি।  বিনোদন অঙ্গনের একজন জনপ্রিয়তা তারকা কিছুদিন আগে অভিযোগ করেছেন, তিনি কোনও ফেসবুক আইডি খোলেননি কিন্তু তার নামে প্রচুর আইডি রয়েছে। আরেকজন তারকার কথা জানা গেলো, তিনি নিজে ফেসবুক আইডি না খুললেও তার একজন ভক্ত তার নামে আইডি খুলে চালান।  এমনও অনেকের কথা জানা গেছে, যারা নিজের আইডির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত জানেন না।  যিনি চালান তিনিই জানান।  তিনি কী পোস্ট দিচ্ছে না দিচ্ছেন তা জানেনও না।  ওই তারকার ভক্তরা হয়তো জানছে, তার প্রিয় তারকা তার কমেন্টের উত্তর দিচ্ছেন। এসব থেকে ভয়ানক ঘটনার জন্ম হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।  কারও নামে আইডি খুলে তার পরিচিত জনদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার ঘটনার সংখ্যা তো প্রচুর।  প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার কথা শোনা যায়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব থেকে দূরে থাকতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে।  আর যদি কেউ অনিষ্ট করতে আসে তাহলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আইনি সহায়তা নিতে।  সাইবার সিকিউরিটি আইনেই প্রতিকার পাওয়ার বিধান রয়েছে।  টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছেও প্রতিকারের জন্য যেতে পারেন। সংস্থার কল-সেন্টারে অভিযোগ জানাতে পারেন।  প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ফেসবুক পেজ ভেরিফায়েড হলে এসব সমস্যা দূর হয়ে যায়।  কারণ তখন সবাই জানে এটাই সংশ্লিষ্টর ব্যক্তির অরিজিনাল আইডি। যদিও সবার জন্য কাজটা সহজ নয়।  যার বেশি সংখ্যক ফ্যান-ফলোয়ার আছে তিনি নিয়ম মেনে ফেসবুকের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করে দেখতে পারেন।

এ ধরনের অপকর্মের পরিণতি এবং এ থেকে প্রতিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্প্রতি আমরা এ ধরনের কিছু বিষয় লক্ষ্য করেছি।  দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে এরকম হয়েছে বলে জানা গেছে।  এ ধরনের অপকর্ম যারা করে তাদের হাত থেকে প্রতিকার পাওয়া যায় আইনের সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের ২৪, ২৫ ও ২৯ ধারা মোতাবেক এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় আছে। এই অপরাধের জন্য ৩-৫ বছরের জেল অথবা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।  যিনি ভুক্তভোগী তিনি এই আইনে প্রতিকার চাইতে পারেন। 

নাজমুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগীকে প্রতিকার চাইতে হবে। প্রতিকার চাইলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করে অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে পারে।  এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেসবুকে কারও আইডি দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে আইডিটি আসল না ভুয়া।  ফলে ভুক্তভোগীকে রিপোর্ট করতে হয়। তখন সংশ্লিষ্টরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারেন।

এ ধরনের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ- যখনই কারও সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন প্রমাণসহ (যদি সম্ভব হয়) নিকটস্থ থানায় রিপোর্ট করেন।  থানাতেই অভিযোগ জানাতে হয়।  থানা যদি তদন্ত করে না পারে বা খুব জটিল হলে বিষয়গুলো তখন আমাদের কাছেসহ আরও যেসব স্টেকহোল্ডাররা আছে তাদের কাছে চলে যায়।  তারা তখন বিষয়টি দেখভাল করে।

এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা কী জানতে চাইলে বিটিআরসির উপ-পরিচালক জাকির হোসেন খাঁন (মিডিয়া উইং) বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিটিআরসি সম্মিলিতভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে থাকে।  তিনি উল্লেখ করেন, ফেসবুক বা এ জাতীয় মাধ্যমে কেউ কোনও অনিষ্ট করলে এবং কেউ তা অভিযোগ আকারে জানানোর আগে মূলত বোঝার উপায় নেই কি হচ্ছে বা হয়েছে।  ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলে তখন প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তিনি জানান, বিটিআরসির শর্ট-কোড নম্বর  ‘১০০’-এ ফোন করে, বিটিআরসিতে চিঠি পাঠিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে পারেন।  কমিশন তার সাধ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তিনি জানান, এসব অপরাধ-অপকর্ম যারা করে তাদের দোর গোঁড়ায় পৌঁছানোর মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। 

তিনি বলেন, আমরা সেই সক্ষমতা অর্জন করে নিয়ত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধান দিতে পারবো আশা করি।  তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাষ্ট্র বিরোধী কিছু হচ্ছে কিনা, ধর্মীয় কোনও বিষয় নিয়ে কেউ কোনও বিতর্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে কিনা, কোনও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কেউ উস্কানিমূলক কিছু বলে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে কিনা সেসব কমিশন তার সাধ্যের মধ্যে মনিটর করার চেষ্টা করে থাকে।  এরকম কিছু পেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক ও ফেসবুক ডেভেলপারে সার্কেলের কমিউনিটি লিডার আরিফ নিজামী বলেন, যারা এসব করে তারা আসলে জানে না পরিণাম সম্পর্কে। অন্যের নামে আইডি খুললে, সেই আইডি থেকে অন্যের পোস্টে কমেন্ট করলে কী ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে এদের (যারা এসবের সঙ্গে জড়িত) কোনও ধারণা নেই।  ভুক্তভোগী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি অভিযুক্ত বা অনিষ্টকারীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করতে পারেন।  মানহানিরও মামলা করতে পারেন।

তিনি জানান, আজকাল অনেক রাজনৈতিক নেতা, সেলিব্রেটি এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামেও ভুয়া আইডি খুলে প্রতারণা, বাজে মন্তব্য করা, অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করছে।  ভুয়া আইডির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে গেলেও এখন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাসপোর্ট বা শুধু জন্ম তারিখ চাওয়া হয়ে থাকে।  দিতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।  ওরা পরীক্ষা করে দেখে কোনও আইডিটা আগে খোলা হয়েছে, বিভিন্ন ডাটা, ছবি নিয়ে তারা গবেষণা করে একটি উপসংহারে পৌঁছে সমস্যার সমাধান দিতে পারে। এটা করতে পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আইডি সেফ।  তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক কারও কোনও ফেসবুক আইডি নেই।  তার নামে যদি ফেক আইডি খোলা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী নিজে প্রতিকার চাইতে গেলেও সমস্যায় পড়বেন।  তার যদি আইডিই না থাকে তাহলে কোনটাকে বন্ধ করা হবে। বিষয়টা বড়ই চ্যালেঞ্জিং।  কেউ রিপোর্ট করলেই আজকাল কাজ হচ্ছে না।  ভুয়া আইডি বলে কারও রিপোর্টের কারণে কোনওটা বন্ধ করা হলে যদি সে প্রমাণাদি নিয়ে দাবি করে বসে তারটা ভুয়া নয়, অরিজিনাল আইডি।  ফলে বিষয়গুলো দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও