X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্চ মাস আমার মনে প্রিয় স্মৃতি বয়ে আনে: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
০৯ মার্চ ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৯ মার্চের ঘটনা।)

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর ১৯৭৩ সালের এদিন  সন্ধ্যায় গণভবনে স্রোতের মতো দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বিপুল নির্বাচনি জয়ে সবাই অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানান। এরই মাঝে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি রোমন্থন শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘মার্চ মাস আমার মনে দুঃখের এবং প্রিয় স্মৃতি বয়ে আনে।’ তিনি বলেন, তাঁর জন্মদিন ১৭ মার্চ। আবার ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তিনি জীবনে প্রথম পাকিস্তানি একনায়কদের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারারুদ্ধ হন। তাঁর একমাত্র অপরাধ ছিল—তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জাতির পিতা তাঁর ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি পাকিস্তানি সামরিক একনায়কত্বের ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই বছরই ২৫ মার্চ ইয়াহিয়ার বাহিনী তাঁকে কারারুদ্ধ করে। তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে ঐতিহাসিক রমনা রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় যোগদানকারী বিশাল জনতার কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন যে ৭ মার্চে, দুই বছর পর সেই দিনেই সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তিনি প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হয়েছেন। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন। চারপাশের দর্শকদের কথা তাঁর আর মনে নেই। কিন্তু তাঁর এই সম্মোহন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আরও দর্শক তাঁকে অভিনন্দন জানাতে আসছিল। তিনি আবারও প্রফুল্ল চিত্তে তাদের সঙ্গে হাস্যপরিহাস ও কথাবার্তায় নতুন করে যোগ দেন।

বাংলাদেশ অবজারভার, ১০ মার্চ ১৯৭৩ ১৮ মার্চ আ.লীগের শপথ দিবস

এদিন জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশ্যে শপথ নেবেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন এই উদ্যানে। ১৮ মার্চ শপথ দিবসে বিকাল তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জানান।

সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়ে তুলি

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনোত্তর এক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমাদের স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলা গড়ে তুলি।’ দেশের সবার জন্য যাতে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, সেজন্য তিনি দেশবাসীকে নতুন করে জাতির পুনর্গঠনের সুবিশাল কাজে আত্মোৎসর্গ করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘সমস্ত রকম শোষণ থেকে মুক্ত একটি সমাজ কায়েমের জন্য আসুন এবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।’ বাসস ও এনা পরিবেশিত এই খবরে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণকে রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতির প্রতি অকুণ্ঠভাবে আত্মনিবেদিত থাকার জন্য

দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মার্চ ১৯৭৩

অভিনন্দন জানান। ক্ষমতাসীন করার মাধ্যমে দেশবাসী তাঁর প্রতি ও তার দল আওয়ামী লীগের প্রতি আরেকবার যে আস্থা জ্ঞাপন করেছে, সে জন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা,  সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী  এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ যারা দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে শেষ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বাণীতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হলো। এবার আসুন, আমাদের স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলা গড়ার জন্য আমরা নতুন করে জাতি গঠনের সুবিশাল কাজে আত্মোৎসর্গ করি। যাতে করে দেশের সবাইকে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও বাসস্থান দেওয়া যায়। আসুন, এবার সমস্ত রকম শোষণ থেকে মুক্ত একটি সমাজকর্মের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।’

সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু

দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাধিক ভোট পান। ঢাকার নির্বাচনি এলাকায় তিনি মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২ ভোটের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৮০ ভোট পান। খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু ঢাকা নগরীর অপর একটি নির্বাচনি এলাকায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৬১ ভোট পেয়েছেন। শহরের যে দুটি নির্বাচনি এলাকায় বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হয়েছেন, একবারও তিনি সেখানে সফর করেননি। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেওয়ায় তাঁর প্রতি জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং তাঁর নেতৃত্বে তাদের আস্থা প্রমাণিত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মার্চ ১৯৭৩

সাফল্য স্বীকৃতির দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে

বিশ্বের পত্রপত্রিকায় নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে নানা খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ মুজিবের সাফল্য অপ্রত্যাশিত কিছু না। তবে সাফল্যের ব্যাপকতা কিছুটা বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবি আইনত ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে বলে টাইমসের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়। পত্রিকায় আরও বলা হয়, এই মানুষের পেছনে কতগুলো সঙ্গত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কারণ ছিল।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!