X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে করোনার থাবার আদ্যোপান্ত

সাদ্দিফ অভি
০৮ মার্চ ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:৫৫

চীনের উহান প্রদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি এবং করোনায় মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ । পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চ মাসে কম সংখ্যক শনাক্ত ও মৃত্যু দিয়ে করোনার সংক্রমণ শুরু হলেও ধীরে ধীরে বাড়ে এপ্রিলে এবং এক লাফে বেড়ে যায় মে মাসে। মে থেকে শুরু করে জুন, জুলাই ও আগস্ট পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত ছিল। তবে আগস্টের শেষে এসে সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখী বলে ধারণা দেয় পরিসংখ্যান। দেশে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৩ জন করে মারা গেছে করোনার থাবায়।

জানুয়ারি ,২০২০ – বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশের বিমানবন্দরে শুরু হয় যাত্রী স্ক্রিনিং। প্রথম দিকে চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে ২১ জানুয়ারি ব্রিফিং চালু করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) । ব্রিফিং করতেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। ওই ব্রিফিংয়ে তুলে ধরা হতো স্ক্রিনিং পরিস্থিতি , সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার তথ্য এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি। ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নিতেন। তবে তাও নিয়মিত হয়নি। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩০ জানুয়ারি (বাংলাদেশে ৩১ জানুয়ারি) বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

ফেব্রুয়ারি, ২০২০ - এক মাসে (২১ জানুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সব প্রবেশপথে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়। এরমধ্যে সন্দেহজনক ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।  বাংলাদেশে তখনও করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী পাওয়া যায়নি। তবে চীনসহ বিভিন্ন দেশে এ রোগে প্রায় পৌনে এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং মৃত্যু হয়েছিল ২ হাজার ২৪৫ জনের। ১ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে ফিরেছেন ৩১২ জন বাংলাদেশি। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় আশকোনা হজ ক্যাম্পে। এরমধ্যে জ্বর থাকায় আট জনকে দুটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী (ফাইল ছবি)  

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত এবং মৃত্যু হয় মার্চে 

৮ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানানো হয় বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর। ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন,  এতদিন আপনাদের যা বলে এসেছি আজ আর তা বলতে পারছি না। বাংলাদেশে তিন জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন পুরুষ, একজন নারী। তাছাড়া ১৮ মার্চ ঘোষণা আসে করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যুর। মৃত ব্যক্তি ৭০ ঊর্ধ্ব ছিলেন।  বাংলাদেশে তখন পর্যন্ত ১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার আগের দিন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০। নতুন আক্রান্ত চার জনের মধ্যে একজন নারী ও তিন জন পুরুষ। একজন আগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন। আর বাকি তিন জন বিদেশ থেকে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছেন। মার্চে করোনা শনাক্ত হয় ৫১ জন এবং মৃত্যু হয় ৫ জনের।

মুজিববর্ষের আয়োজন পুনর্বিন্যাস

মার্চ মাসেই বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা করা মুজিববর্ষ বিপুল আয়োজনে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে ২০২০ সালের  ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ই মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার। দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল সরকারের। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জানায়,  ব্যাপক প্রস্তুতির পরও করোনাভাইরাসের কারণে সেটাকে পুনর্বিন্যাস করার প্রয়োজন হয়েছে।

লকডাউন এলাকা দেশের ইতিহাসে প্রথম লকডাউন শিবচরে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার তিনটি এলাকা ১৯ মার্চ থেকে লকডাউন করে রাখা হয়। এটি দেশের প্রথম লকডাউন করা উপজেলা। উপজেলার শিবরাকান্দি, বহেরাতলা এবং চর বাঁচামারা গ্রামে একাধিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় সেখানে বেড়াতে আসা প্রবাসীদের, সেই সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা  হয়। মাদারীপুরের শিবচরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত বছর ১৪ মার্চ। করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯ মার্চ দেশের প্রথম ‘কন্টেইনমেন্ট’ (নিয়ন্ত্রিত এলাকা) ঘোষণা করা হয় শিবচর উপজেলাকে। দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ শিবচরে। আর করোনায় মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের দুই বাসিন্দা মারা যান ২১ ও ২২ মার্চ। এরপর ২৩ মার্চ টোলারবাগকে সংক্রমণের হটস্পট (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

করোনা ব্রিফিং অনলাইন ব্রিফিং শুরু হয় মার্চে

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) করোনা বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং চালু করে জানুয়ারি মাসে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় এই ব্রিফিং করতেন। সংক্রমণ ঝুঁকির কথা বিবেচনা সরাসরি ব্রিফিং বন্ধ হয়ে যায়। ২৩ মার্চ থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অনলাইন ব্রিফিংয়েও সাংবাদিকদের যুক্ত হওয়ার এবং প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। 

সাধারণ ছুটি শুরু

করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিসও বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ দফার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।  ১০ দফা সিদ্ধান্তের মধ্য রয়েছে গণপরিবহন চলাচল সীমিত রাখা, সব রকম সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার কথা। এরপর চার দফা বাড়ানোর পর ছুটি বর্ধিত হয় ৫ মে পর্যন্ত। এরপর আরেক দফায় ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাইরে চলাচল জনসাধারণের জন্য সীমিত করা হয়। 

করোনা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ এপ্রিলে

গত বছরের ৬ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া আক্রান্তের তথ্য আর অনলাইনে ব্রিফিংয়ে দেওয়া তথ্যের গরমিলের দেখা দিলে সঠিক তথ্য কোনটি জানতে চান সাংবাদিকরা। এরপর দিন থেকে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই ব্রিফিংয়ের নাম হয় ‘দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিন’। এপ্রিলে  স্বাস্থ্য বুলেটিন পাঠ করার দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েন আইইডিসিআরের তৎকালীন পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তখন থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বুলেটিনের দায়িত্বে ছিলেন। মাঝে কয়েক দিন তাঁর সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাকেও যুক্ত হতে দেখা গেছে। শুধু প্রতিদিন বেলা আড়াইটায় বুলেটিন চালু রাখা হয়েছিল।

ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমাগম সীমিত করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় ৬ এপ্রিল  জুমার জামাতে ১০ জন এবং ওয়াক্তি নামাজে পাঁচ জনের জামাতের অনুমতি দেয়। পরে ২৩ এপ্রিল থেকে রমজান মাসে তারাবির জামাতও সীমিত আকারে আদায়ের নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ওই নির্দেশনায় সর্বোচ্চ ১২ জনের মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।

৫ এপ্রিল রাজধানীর টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর) এবং গাইবান্ধা (সাদুল্যাপুর)—এই পাঁচটি জায়গাকে সংক্রমণের ক্লাস্টার (কাছাকাছি একই জায়গায় অনেক আক্রান্ত) হিসেবে চিহ্নিত করে আইইডিসিআর। এই পাঁচটি জায়গার চারটিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে যায় নারায়ণগঞ্জ। ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সেখান থেকে অনেকে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ১০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জকে সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে আইইডিসিআর। এপ্রিলে ৭ হাজার ৬১৬ জন শনাক্ত হয় এবং মৃত্যু হয় ১৬৩ জনের।

লোকারণ্য নিউ মার্কেট এলাকা, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই মে’তে খুলে শপিং মল-দোকানপাট 

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১০ মে থেকে দোকানপাট ও শপিং মল খোলার অনুমতি দেয় সরকার। বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশের শপিং মলগুলো খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।  টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর সীমিত আকারে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার ঘোষণা আসে। তখন করোনার সংক্রমণ ছিল বাড়তির দিকে। এ সময় গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচলও বন্ধ ছিল। মে’তে শনাক্ত হয় ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন এবং মৃত্যু হয় ৪৮৩ জনের। ২৬ মে থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর আনুষ্ঠানিকভাবে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার প্রকাশ করা শুরু করে। এদিন ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর হিসাব করে দেখা গেছে, এদিন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ২২।

ওয়ারী লকডাউন জুনে রেড জোন – লকডাউনের কবলে দেশের এক এক এলাকা

১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকাকে 'রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে' ভাগ করে ভিন্নমাত্রায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজাবাজার লাল এলাকা (রেড জোন) ঘোষণা করে ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে লকডাউন শুরু হয়। সংক্রমণের উচ্চ হারের কারণে ওই এলাকাকে লকডাউন করা হয়। লকডাউন চলাকালে একমাত্র চিকিৎসক ও সংবাদকর্মী ছাড়া কেউ ওই এলাকা থেকে বের হতে কিংবা নতুন করে ঢুকতে পারবে না বলে জানানো হয়। বাংলাদেশে এর আগে এমন কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়নি।

করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হার আছে বাংলাদেশের এমন দশটি জেলাকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২১ জুন এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।  মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও চট্টগ্রাম জেলার নির্দিষ্ট অঞ্চলকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। জুনে শনাক্ত হয় ৯৮ হাজার ৩৩০ জনের এবং মৃত্যু হয় এক হাজার ১৯৭ জনের। এই মাসেই করোনার মোট শনাক্ত ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। 

করোনা নমুনা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয় জুলাইয়ে

জুলাইতে মোট করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয় ৯১ হাজার ৯১৮ জন এবং মৃত্যু হয় ১ হাজার ২৬৪ জনের। এরমধ্যে ২ জুলাই এযাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়। এদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৯ জন। এরপর আর এত শনাক্ত একদিনে হয়নি।

৪ জুলাই ভোর ৬টা থেকে লকডাউন করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী এলাকা। ৪ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ২১ দিন এই এলাকা লকডাউন করা হয়।

প্রথম বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের দাবি করে ‘গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’। এই টিকার নাম প্রথমে নাম রাখা হয় ব্যানকোভিড। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ নামে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চাওয়া হয়। 

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে করোনা বুলেটিন অনলাইন ব্রিফিং বন্ধ হয় আগস্টে

১২ আগস্ট থেকে অনলাইন ব্রিফিং বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এদিনের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর আড়াইটায় দেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরা হতো দৈনিক স্বাস্থ্য বুলেটিনে। এরপর থেকে প্রতিদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমে করোনার তথ্য দিয়ে আসছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগস্টে শনাক্ত ৭৩ হাজার ১৩৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ১৪৯ জনের।

জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, আগস্টে করোনার পিক পার করেছে বাংলাদেশ।

করোনা টিকা করোনার টিকা আনার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

বিশ্বের যেখানেই টিকা আবিষ্কার হোক না কেন তা দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আলাদাভাবে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে সংসদে জানান তিনি। 

করোনায় সেপ্টেম্বরে মারা যায় ৯৩৫ জন এবং শনাক্ত হয় ৪৮ হাজার ৫৩৩ জন। আর তখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৯ এবং মোট মৃত্যু ছিল ৫ হাজার ২৫১ জন।

এটুআই আয়োজিত ফ্রি অনলাইন ক্লাস অনলাইনে ক্লাস শুরু অক্টোবরে, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল 

কোভিড-১৯-এর কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে উদ্দেশ্যে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৪ অক্টোবর থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয় চিঠিতে। 

করোনাভাইরাসের কারণে এবারের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা হবে না বলে জানায় শিক্ষামন্ত্রী। এসব শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির মূল্যায়ন করা হবে।

এই মাসে মোট শনাক্ত হয় ৪২ হাজার ৬৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৬৫১ জন।

গণপরিবহনে মাস্ক পরে উঠতে হবে (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) নভেম্বরে মাস্ক নিশ্চিতে কঠোর সরকার

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও অনেকেই তা না মানায় ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নামায় সরকার। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নভেম্বরে মোট শনাক্ত হয় ৫৫ হাজার ৬৮০ জন এবং মারা যায় ৭০৩ জন।

কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আনার জন্য চুক্তি সিরামের সঙ্গে 

৫ নভেম্বর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করে। চুক্তির আওতায় সেরাম ইনস্টিটিউট ৩ কোটি টিকা বাংলাদেশকে দেবে।

ভারতের উপহারের ২০ লাখ ভ্যাক্সিন ও কেনা ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসে জানুয়ারিতে

ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন (কোভিশিল্ড) ২১ জানুয়ারি সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসে।  এরপর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসে ২৫ জানুয়ারি। এই চালানে আসে ৫০ লাখ ডোজ সেরাম ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা ‘কোভিশিল্ড’। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের এক কোটি নয় লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে। 

টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

২৭ জানুয়ারি দেশে করোনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। এর মাধ্যমে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন প্রাথমিকভাবে ৫৬৭ জনকে টিকা প্রয়োগ করা হয় কুর্মিটোলা হাসপাতালে।

মানিকগঞ্জে একসঙ্গে টিকা গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক (মাঝে), পুলিশ সুপার (তার বামে) ও সিভিল সার্জন দেশব্যাপী ব্যাপক হারে টিকা প্রদান শুরু

সারাদেশে ব্যাপক আকারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগে টিকা নিতে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন নিবন্ধন করেছে এবং ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন।

করোনার টিকা নিলেন প্রধানমন্ত্রী টিকা নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 

করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে টিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ মার্চ তিনি এই টিকা গ্রহণ করেন।

এক বছরে সাড়ে ৫ লাখ ছাড়ালো করোনা শনাক্ত

দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের এক বছরের প্রাক্কালে মোট শনাক্ত ছাড়িয়েছে সাড়ে ৫ লাখ। রবিবার (৭ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন শনাক্ত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৮ হাজার ৪৬২ জন। 

 

 

 

   

 

/এফএএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে ক্রিকেটারদের ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন
চট্টগ্রামে ক্রিকেটারদের ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাঙামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
রাঙামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা