X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণে গর্জে ওঠা জনতা

লেখক ভট্টাচার্য
০৭ মার্চ ২০২১, ১৫:০৬আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৫:০৬

লেখক ভট্টাচার্য
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ভাষণ। এর ঐতিহাসিকতা বিবেচনায় ইতোমধ্যেই এ ভাষণের অনুবাদ, বিশ্লেষণ এবং গবেষণা শুরু হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক ফলাফল বিবেচনায় এই ভাষণ যে একটি জাতি গঠনের পূর্ণ দিকনির্দেশনা এবং পরিকল্পনার পূর্ণ দলিল, তা এই এত বছর পরও স্পষ্ট এবং পরীক্ষিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠী দ্বারা দীর্ঘদিন যাবৎ নজরবন্দি ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠী যে এই নজরবন্দিতে সন্তুষ্ট না থেকে বাঙালির স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করার তাগিদে যেকোনও সময় গ্রেফতার করতে পারেন সেই বিষয়টিও বঙ্গবন্ধু আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর তাই গ্রেফতারের মাধ্যমে তাঁকে গুম করে ফেললেও দিকনির্দেশনা কী হবে, কী হবে পূর্ণ পরিকল্পনা সেটাও পরিষ্কার করে গেছেন তৎকালীন রেসকোর্সের ময়দানে দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে,

‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি…’।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর এক তর্জনীর গর্জনে উপচে ওঠা জনতা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন স্বাধীনতা ছাড়া তারা ঘরে ফিরবে না। শোষণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এবার আর তাদের কোনও সান্ত্বনা বশ করা যাবে না। এই জাগরণ তাদের মুক্তির সপক্ষেই। সেদিন সেই ঐতিহাসিক ভাষণ মঞ্চ থেকে বক্তব্যের শেষাংশে তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,

‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

আর এরপর বাঙালির জন্য মুক্তি ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। তবে আক্রান্ত হওয়ার পর পাল্টা আক্রমণে বাঙালি সেদিন একেবারেই প্রস্তুতি গ্রহণ করার সুযোগ পায়নি। তারপরও বাঙালির পাল্টা আক্রমণ এবং তুমুল প্রতিরোধে বিশ্ববাসী যা দেখেছে তাতে বিশ্ববাসীও সেদিন পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর এই বাঙালি মরতে জানে হারতে জানে না। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশকে আর যাই হোক দাবায়ে রাখা যাবে না। মুক্তির নেশায় জাগরিত এই বাংলার স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী এবং অবধারিত। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাও তাই।

সেদিনের এই ভাষণের তাৎপর্য অনুসন্ধানে গভীর পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কারণ, জনতার দিকে চেয়ে জনতার দুঃখ অনুভবে বঙ্গবন্ধু সেদিন তাৎক্ষণিক যে ভাষণ দিয়েছেন তার প্রতিটি শব্দ বাঙালির নির্যাতনের করুণ ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে। বেশ কয়েক ভাষায় অনূদিত হয়েছে এই ভাষণ। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে ভাষণ নিয়ে বিশ্ববাসী গবেষণায় নেমেছে সেই ভাষণটিকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকরা মুছে ফেলতে চেয়েছিল, অডিও-লেখনী সব স্থান থেকেই।

যে মুক্তিযুদ্ধের রক্ত-নদী পেরিয়ে এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল এই ভাষণের অনুপ্রেরণায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রত্যেক শব্দ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, আত্মবিশ্বাস হয়ে ছায়াসঙ্গী হয়ে থেকেছে। তাই নিঃসংকোচে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু যে মধুর কবিতা-ভাষণ পাঠ করেন সেটিই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। সেই ভাষণের নির্দেশনায় বাঙালি ঘরে ঘরে দুর্গ করে তোলে। যার যা কিছু ছিল তা নিয়েই লড়াই করে। ফলাফল আজকের এই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব।

আজ সেই সার্বভৌমত্ব এবং গৌরবের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতার অসমাপ্ত কাজকে জীবনযুদ্ধ হিসেবে নিয়ে সংগ্রাম করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। দেশে ফেরা থেকে শুরু করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সচল রাখা, প্রতিক্ষেত্রেই তাঁকে পড়তে হয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। বাবার মতো সেই চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গনও করেছেন হাসিমুখে। যার ফলাফল আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের ইমার্জিং টাইগার। আর এই অর্জনের ধারাবাহিকতা সচল রাখতে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।

নিজেদের সমৃদ্ধ এবং সচল রাখার তাগিদে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন থেকে মানুষের জন্য করবার অনন্ত পন্থা শিখতে হবে। বিসর্জনের শিক্ষায় নিজেকে তৈরি করে দেশ ও দশের সেবায় আত্মবিনিয়োগ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন থেকে শিখে গরিব মেহনতি মানুষের জন্য অর্থাৎ শোষিত বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণীয় এবং ভালোবাসার পাত্র হয়ে উঠতে হবে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ