X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষামন্ত্রীকে দুষলেন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ভিসি কলিম উল্লাহ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ মার্চ ২০২১, ১৫:৫৪আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৬

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির সব দায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বলে অভিযোগ করেছেন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকে যে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি, আমি দায়িত্ব নিয়েই বলবো এই পুরো পরিস্থিতিটা আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয় ও আশকারায় হয়েছে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে অন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা তার সঙ্গে দেখা করতে যায় সময় নির্ধারণ করে, মন্ত্রণালয়ে তার অফিসে সকাল ১০টায় থাকলে তিনি হাজির হন বিকাল চারটায়। আমাদের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পুরোটা দিন তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কখনও হয়নি এবং এই জাতীয় যে মনোভাব এটি বহিঃপ্রকাশ হয়েছে তখনই। যতবার আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার কাছে যেতে চেয়েছি, ক্রোড়পত্রের জন্য বাণী চেয়েছি, একটিবারও তার কাছে কোনও আশীর্বাদ পাইনি। আমাদের মাননীয় উপমন্ত্রী খুবই সৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। যতবার তার কাছে গিয়েছি তার কাছে বাণী পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পেয়েছি কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর কাছেই অবজ্ঞাটা লাভ করেছি।’

ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ দাবি করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরে যাবতীয় যা কিছু ঘটনা ঘটেছে এই সবকিছু শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং আনুকূল্যে ঘটেছে বলে মনে করি। না হলে এরকম ন্যক্কারজনক পরিস্থিতি কখনোই ঘটতো না।’

কলিম উল্লাহ বলেন, ‘ইউজিসির রিপোর্টে পেছনে পুরোপুরি দায়-দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীর। তার পরামর্শে কমিটি এই রকম রিপোর্ট করেছে। মূলত আমার অভিযোগের ভিত্তিতে এই বিষয়গুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়টা হচ্ছে যে কারণে এই সমস্যাটা, সেখান থেকে দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে দিয়ে দায় এড়িয়ে অভিযোগ কেনও করলাম সেটা অন্যায় হয়েছে। দেশে দুর্নীতি নিয়ে যে ধামাচাপা দেওয়ার একটা কালচার আছে, শিক্ষামন্ত্রীর অফিস থেকে রিপোর্টের কয়েকটি অংশ লিক করা হয়েছে এই হাইপ তৈরি করার জন্য, দোষ আমাদের ঘাড়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য। যাতে আমরা ভয় পেয়ে সত্যি বিষয়টি প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করি। এটা একেবারে একটি রাজনৈতিক ন্যক্কারজনক অপকৌশল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, এরকম হীনমন্যতা, রাজনীতি করার জায়গা নয়, এটা আমি দ্ব্যর্থহীন ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই।’

বেরোবি ভিসি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পরে উত্তরাধিকার সূত্রে সমস্যাগুলো আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। হলের সাবেক উপাচার্যের মেয়াদকালীন ক্যাম্পাস দীর্ঘসময় উত্তাল ছিল, বিভিন্ন সময়ে ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে পড়েছেন তিনি। সে সময় কিছু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছিলেন। এরমধ্যে দুটি স্থাপনার একটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নামে ছাত্রী নিবাস এবং আরেকটি হলো তার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে একটি ইনস্টিটিউট। এর পাশাপাশি তৃতীয় আরেকটি ছোটখাটো প্রকল্প, সেটি হচ্ছে স্বাধীনতা স্মারক। এই তিনটি স্থাপনা নিয়ে বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প। এখানে যত রকমের অনিয়ম হতে পারে তাই প্রত্যক্ষ করা গেছে। কারণ, যেকোনও স্থাপনা ভবনের ভিত্তি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে যদি সমস্যা থাকে তাহলে তার জন্য সারা জীবন ভুগতে হয়, তাছাড়া নকশায়ও পরিবর্তন করেছে। আমাদের অনুমান মূলত এই কাণ্ডটি করা হয়েছে একটা ভিন্ন চিন্তা থেকে। অর্থাৎ জায়গার পরিমাণ যদি বাড়িয়ে নেওয়া হয় তাহলে তাতে খরচ বেশি, আর খরচ বেশি হলে সেখানে নানা ধরনের অনিয়ম করা যায়, অনৈতিক সুবিধা লাভ করা যাবে। এই বিবেচনা থেকে সম্ভবত কাজ করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে উত্তরাধিকার সূত্রেই সমস্যা আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকার ওপরে যদি পেমেন্ট আমরা করতে যাই তাহলে সেটা অ্যাকাউন্ট পে-চেক দিতে হবে, ক্যাশ টাকায় লাখ লাখ টাকা দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমার নানা রকম মুখরোচক গল্প শুনেছি, তাছাড়া কিছু বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য আমরা একটু সময় নিয়েছি। যখন কাজ করতে চেষ্টা করেছি তখন দেখেছি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট যিনি পরামর্শক তার কোনও সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। কারিগরি অনুসন্ধানের বিষয় আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না বলে দেশসেরা বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়েছি। আমরা তার সহায়তা নেই এবং তারপর প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। সেই বিশেষজ্ঞ এরকম একটি প্রকল্পে আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। তিনি অবাক হয়েছেন তার মতো বিশেষজ্ঞকে আমরা এই প্রকল্পের জন্য কীভাবে রাজি করালাম। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে বিভিন্ন সময় নানা রকমের সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। একটি বিষয় হচ্ছে, আমাকে পাওয়া যায় না, আমি নিখোঁজ হয়ে যাই। আমি ঢাকায় অবস্থান করি। মজার বিষয় হচ্ছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমি প্রায় ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা কাজ করি সপ্তাহের ৭ দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। যখন ঢাকায় অবস্থান করি তখন আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকায় যে লিয়াজোঁ অফিস আছে সেখানে সময় দেই। আর যখন রংপুরে অবস্থান করি ক্যাম্পাসে যে আমাদের বাংলো আছে, সেই বাংলো অফিসে পুরো সময়টা ব্যয় করি।’

প্রসঙ্গত, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্পের ব্যয় নতুন করে ১০৮ ভাগ বৃদ্ধির নামে লুটপাটের ঘটনায় ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তে পুরো ঘটনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ও তার ভাগ্নে প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরসহ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের দায়ী করা হয়।

বিস্তারিত জানতে- বেরোবিতে হল ও ভবন নির্মাণে অনিয়ম, উপাচার্যকে দায়ী করে প্রতিবেদন

/এসও/এনএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন