২০২০ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) শিশুদের বিরুদ্ধে অনলাইনে যৌন শোষণের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি ও পরিস্থিতি যাচাই এবং প্রবণতা বিশ্লেষণ বিষয়ক এক গবেষণা পরিচালনা করে। যেখানে দেখা গেছে, শতকরা ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়ে শিশু অনলাইনে যৌন শোষণ, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কোভিড পরবর্তী জরিপ পরিচালনায় দেখা যায় এই শতকরা হার প্রায় চারগুণ বেড়েছে।
রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হল-এ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আসকের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট নীনা গোস্বামী।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়ক ওম্বিকা রায় বলেন, ‘দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস হয়েছে ঠিকই কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতন বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনও বিধান রাখা হয়নি, যার কারণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে।’
আসক জানায়, গত জানুয়ারি মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর শিশু অধিকার ইউনিট চারটি বিভাগের পাঁচটি জেলায় একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ পরিচালনা করেছে। ওই জরিপের মূল লক্ষ্য ছিল করোনাকালে শিশুদের অনলাইনে ঝুঁকির মাত্রা ভয়াবহতা সম্পর্কে বাস্তবিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা। জরিপ কার্যক্রমটি যথাক্রমে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরা জেলায় পরিচালিত হয়েছে। পুরো জরিপ কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহ অঞ্চল এবং তথ্যদাতা বাছাইয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী (পারপাসিভ স্যাম্পলিং) এবং স্বাধীনভাবে (র্যান্ডম স্যাম্পলিং) উভয় ধরনের গবেষণা নমুনায়ন করা হয়েছে। মোট ১০৮ জন তথ্য দাতার মধ্যে ৬১ জন কন্যা শিশু এবং ৪৭ জন ছেলে শিশুর কাছ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্যদাতা শিশুদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ১৭ শতাংশ কর্মজীবী শিশু। মোট তথ্যদাতার মধ্যে ৬ শতাংশ ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।
জরিপের প্রাপ্ত ফল থেকে জানা যায়, ৩০ শতাংশ শিশু জানিয়েছেন করোনাকালে তারা কোনও না কোনোভাবে ইন্টারনেটে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ১২ শতাংশ শিশু এই বিষয়ে কোনও তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নিপীড়িত শিশুদের ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হচ্ছে কন্যা শিশু, ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলে শিশু।
আসক জানায়, করোনাকালে অনলাইনে নিপীড়নের শিকার শিশুদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ জানিয়েছেন তারা অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনলাইনে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪১ শতাংশ শিশু তাদের অভিভাবক ও পরিবার পরিজনকে অবহিত করেছেন; নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।
আসক অনলাইনে শিশু নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরাধ ও প্রতিকারে বেশ কিছু সুপারিশ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল: শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা, এসব বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ, অভিভাবকসহ সকল পর্যায়ের সচেতনতা সৃষ্টি, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস ব্যবহারে উৎসাহী করা, প্রাসঙ্গিক আইনগুলোতে সংশোধনী আনা।