X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজবন্দিদের প্রথম একুশ

উদিসা ইসলাম
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:১০আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:১৬

বছর পেরোলেও ১৯৫২ সালের একুশের সৈনিকেরা তখনও কারাবন্দি। অমর একুশের প্রথম স্মৃতিবার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন কীভাবে তা নিয়ে ১৯৭৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্মৃতিচারণ করেন ফজলুল করিম। প্রথম শহীদ দিবস নিয়ে তিনি বলছেন, ১৯৫৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দোতলায় ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যে কয়জন নিরাপত্তা বন্দি তখনও আটক ছিলেন, তারা হলেন অধ্যাপক অজিত গুহ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অলি আহাদ, পাবনার আব্দুল মতিন এবং টাঙ্গাইলের শামসুল হক। ফজলুল করিম এ কয়টা নামই মনে করতে পেরেছিলেন।

স্মৃতিচারণে বলছেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওয়ার্ডে বসে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি কীভাবে পালন করবো, তা নিয়ে দিনের কর্মসূচিও মোটামুটি ঠিক করা হয়। ঠিক হলো, আমরা সকলে একুশে ফেব্রুয়ারি উপবাস করবো, কালোব্যাজ ধারণ করবো এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবো। জেল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হলো যে আমাদের উপবাসের দরুন সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাওয়া বাবদ যে অর্থ বেঁচে যাবে তা যেন রাজবন্দিদের সাহায্য তহবিলে নগদ জমা দেওয়া হয়। সব ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল কালো কাপড় নিয়ে। কোথায় পাওয়া যাবে ওটা? দিনের বেলায় মনে পড়লে, বাইরে থেকে কোনওভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু রাতে কারাগারে বন্ধ প্রকোষ্ঠে বসে এর সুরাহা করার পর খুঁজে পেলাম না।’

কালো ব্যাজ যোগাড় হয়েছিল

ফজলুল করিম লিখছেন, ‘আমাকে নোয়াখালীতে আটক করার সময় পরনের কালো ব্যাজটি আমার সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে জেলগেটে রেখে এসেছিলাম। পরে আমাকে ঢাকায় আনা হলে সেটি সেখানেই রয়ে যায়। পরে চিঠি লিখে সেই ব্যাজ ঢাকা কারাগারে আনা হয়েছে বটে, কিন্তু সেটি ভেতরে আনার নিয়ম ছিল না।

ব্যাজের ব্যবস্থা করেছিলেন অজিত গুহ। অজিতদার একজোড়া কালো সিল্কের মোজা ছিল। একেবারে মিশকালো। তিনি তার একটি মোজা কেটে ব্যাজ তৈরি করেছেন সবার জন্য।’

রাজবন্দিদের মুক্তি চাই

“সকাল হতেই নাজিমুদ্দিন রোড ধরে আসতে থাকে ছোটবড় মিছিল। কালো পতাকা দোতলা থেকে আগেই দেখা যেত। মিছেল কাছে আসলে সবাই বের হয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিলে ওপাশ থেকে আরও দ্বিগুণ জোরে ওরা বলতো রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। তখনকার দিনে জেলখানা পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় সব মিছিলের স্লোগান ছিল রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।”

মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন রাজবন্দিরা
 

“বংশাল ও চকবাজারের দিক থেকে ছোট-বড় মিছিল যাচ্ছে। নাজিমুদ্দিন রোড দিয়ে মিছিলের কালো পতাকাগুলো দোতলা থেকে আমরা আগেই দেখতে পেতাম। একটা কালো পতাকার ব্যবস্থা করেছিলাম। মতিন সাহেবের একটা কালো গাউন ছিল। সেটাকে কালো পতাকা বানিয়েছিলাম। মিছিল দেখলে দোতলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে যেতাম। মাজারের সঙ্গে জেলখানার পাঁচিলের মাঠ ঘুরে মুনির ভাই স্লোগান দিতেন। আমরা সবাই তাতে গলা মেলাতাম। মুনির ভাইয়ের দ্বরাজ গলা ছিল। যে যতো জোরে সম্ভব চিৎকার করে স্লোগান দিতাম। আমাদের কণ্ঠ শুনে বাইরে মিছিলের স্লোগান আরও তীব্রতর হতো। এভাবে বিকাল পর্যন্ত জেলখানার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছে মিছিল। সেদিন স্লোগানে স্লোগানে জেলখানার একাংশ কাঁপছিল। আমাদের জেল কর্তৃপক্ষের কেউ বাধা দিতে সেদিন সাহস পায়নি। মনটা খুব ছটফট করতো বাইরে যাওয়ার জন্য। সন্ধ্যায় অজিত গুহ রবীন্দ্রনাথ থেকে ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কিত রচনার নির্বাচিত অংশ পাঠ করলেন। এভাবেই আমরা ’৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কারাগারে বসে পার করলাম।”

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কোল্ড চেইনের উন্নয়নে সমন্বিত নীতির বাস্তবায়ন চান উদ্যোক্তারা
কোল্ড চেইনের উন্নয়নে সমন্বিত নীতির বাস্তবায়ন চান উদ্যোক্তারা
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, যা জানা গেলো
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, যা জানা গেলো
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি