X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার সৈকতে মানুষের ঢেউ: রুম নেই, রাত কাটছে বালিয়াড়িতে

কক্সবাজার প্রতিনিধি
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৫৩আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:৪৪

মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সাপ্তাহিক টানা তিন দিনের ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। হঠাৎ পর্যটকের ঢল নামায় হোটেলগুলোতে আগেই বুক হয়ে যায় সবগুলো কক্ষ। বাধ্য হয়ে বাকিদের সৈকতের বালিয়াড়ি ও বাসে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। এ সুযোগে একটি চক্র অসাধু ব্যবসায় নেমেছে। কেউ কেউ সৈকতের আশেপাশে বাসাবাড়িতে রুম ভাড়া দিয়ে আদায় করছে বাড়তি টাকা। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ দাবি করছে, রাতে তারা সৈকতে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে এবং অন্য সমস্যাগুলো  প্রতিরোধে কাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে কক্সবাজারমুখী হয়ে উঠে বিপুল পরিমাণ পর্যটক। এদিন এবং এরপর শুক্রবারে কক্সবাজারের ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল এমনভাবেই ভরে গেছে যে চড়া দামেও রুম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত যাপন করছেন বেশিরভাগ পর্যটক। আবার যারা নিজেরা বাস রিজার্ভ করে ভ্রমণে এসেছেন তাদের রাত কেটেছে বাসের ভেতরেই। গভীর রাতেও সৈকতে মশার ভনভনানির মধ্যেও গিজগিজ করছিল পর্যটক।

করোনা পরিস্থিতির পর কক্সবাজারের এমন চিত্র একেবারেই অন্যরকম। হোটেল কক্ষগুলোতে দুই লাখ পর্যটকের সংস্থান হয়, আর তিন দিনের ছুটিতে এসেছেন অন্তত ৬ লাখ। (শনিবারের ছবি)

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, ‘ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। হুট করে এত পর্যটকের উপস্থিতি দেখে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে দ্বিগুণ জোরদার করেছে। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হোটেল-মোটেল জোনে বিরামহীনভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকে বিশেষ পুলিশ। সৈকতে তিল ধারণের জায়গাও নেই। এত বিপুল সংখ্যক ভ্রমণকারী গত ৫ বছরের সময়েও একসঙ্গে ভিড় জমাননি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক শাকের আহমদ জানান, ‘বাড়তি পর্যটকের বাড়তি সেবা। সৈকতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। মাস্ক পরিধানসহ শারীরিক দূরত্ব মানতে প্রচারণার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে অভিযোগ কেন্দ্র চালু, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘আগের মতো শনিবারও কোনও প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে এসেছে। শনিবার একদিনেই কমপক্ষে তিন লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। এর আগের দিন শুক্রবারও ছিল একই রকম। কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেলে দুই লক্ষাধিক অতিথি থাকতে পারেন। বাদবাকিদের একটু কষ্ট করে রাত অতিবাহিত করতে হচ্ছে।’

এদিকে হোটেলে সিট না পাওয়ার সুযোগে খাবার হোটেলগুলোও বাড়িয়ে দিয়েছে খাবারের দাম। পর্যটন জোনে রাস্তা মেরামতের কাজ চলমান থাকায় যানজটসহ দিনভর নানা সংকট ও দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য পর্যটক। অনেক ভ্রমণকারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাত কাটানোর একটি কক্ষের জন্য। সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেলে সিট না পেয়ে শহরের ঘিঞ্জি এলাকার নিম্নমানের আবাসিক হোটেলের রুম পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ায় পর্যটকরা ভাড়া নিয়ে রাত পোহাতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ঢাকা থেকে আসা মাসুদুল আলম নামের এক পর্যটক জানান, ‘ছুটিতে প্রথমবার কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছি। কিন্তু, এখনকার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ঢাকার মতো মানুষের ভিড়। শুক্রবার কক্সবাজার আসলেও এক রাত সৈকতে ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে শনিবার চড়া দামে হোটেলে রুম পেয়েছি। আমার মনে হয় মৌসুমে কক্সবাজার না এসে অফ-সিজনে আসা উচিত।’

ফরিদপুরের শামশুল হক দম্পতি জীবনের প্রথমবার এসেছেন কক্সব্জাারে। তিনি জানান,‘এই প্রথমবার এসে কক্সবাজারকে দেখলাম। এক সাথে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আর দেখিনি। সৈকতে এত বেশি মানুষ দেখে মনে হচ্ছে এটা ঢেউয়ের সাগর নয় যেন মানুষের সাগর।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দিনে এমন উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও রাতে হোটেল মিলছে না চার লাখ পর্যটকের। টানা তিনদিনের ছুটিতে এ অবস্থাঘটেছে করোনার পর।

নারায়ণগঞ্জের রিজভী আহমদ ন্যান্সী বলেন-‘এতদিন করোনার কারণে ঘরে বন্দি জীবন কাটিয়েছি। সাগর পাড়ে এসে মনে হচ্ছে, এখন আমরা মুক্ত পাখির মতো উড়ছি আর ঘুরছি।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই গাড়িতে গাড়িতে দলবেঁধে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা কয়েকশ নৈশ কোচ শুক্রুবার ও শনিবার সকালে এসে পৌঁছে কক্সবাজারে। এ কারণেঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অসহনীয় যানজট লেগে যায়। একসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক যানবাহন আসায় কক্সবাজার শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে থামিয়েই যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে বাসগুলো। এতে করে পর্যটকদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে দলে দলে পর্যটকরা নামেন কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে। দুপুর হতে না হতেই সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা ভরে যায় মানুষে মানুষে। এ ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী পাথুরে সৈকত থেকে শফির বিল, পাটুয়ারটেক, মনখালী এবং টেকনাফ সৈকত পুরোটাই  ভ্রমণকারীর মিলন মেলায় পরিণত হয়।

এদিকে, কক্সবাজার সৈকত ছেড়ে ভ্রমণকারীরা পর্যটক জাহাজে চড়ে ছুটছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন্স। কক্সবাজার থেকে একটি এবং টেকনাফ থেকে আরও ৭ টি পর্যটক জাহাজসহ সবগুলো জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং স্পিড বোটে করে একদিনে কমপক্ষে ১০ হাজার পর্যটক প্রবাল দ্বীপটি ভ্রমণে গেছেন। এছাড়াও কক্সবাজারের ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়াসহ অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় করছেন পর্যটকরা।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া