X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

জল্পনার রাতে প্রার্থীদের ঘাম ঝরানো ব্যস্ততা, কেন্দ্রে কেন্দ্রে সরঞ্জাম

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:১৫আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:৫৫

রাত পোহালে রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ ধাপে দেশের ৫৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বেশিরভাগ পৌরসভায় ইভিএম এর মাধ্যমে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট কেমন হবে, কে জিতবে তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা, সন্ধ্যারাতেও সরগরম চায়ের আড্ডা কিংবা রাস্তার ওপরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির গল্প। আর প্রার্থীর মধ্যে কাজ করছে নানা উদ্বেগ। এরমধ্যেই ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ভোটের সরঞ্জাম।

সাধারণ ভোটার ইভিএম মেশিন বুঝে ভোট দিতে পারবেন কিনা, তাদের মেশিন বোঝানোর নামে কোনও দলের প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হবে কিনা ভোটের আগের রাতে এসব যেমন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উৎকণ্ঠার কারণ তেমনই আরেক উদ্বেগ ভোট গণনা কীভাবে হবে তা নিয়ে। ইভিএম মেশিনের দিকে, ভোটারদের দিকে, ফলের দিকে কীভাবে রক্ষ্য রাখতে হবে নির্বাচনের আগের দিন প্রার্থীরা তাদের এজেন্টদের তা হাতে কলমে শিখিয়ে দিচ্ছেন। চলছে নানা রকম হিসেব-নিকেশ, গেম প্ল্যান। তবে সব কেন্দ্রে এজেন্টরা গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা সে বিষয়েও উদ্বেগ আছে বিভিন্ন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের। এই উদ্বেগ সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরোধী ও দলীয় বিদ্রোহীদের নিয়ে। আবার বিরোধী, দলীয় বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও একই ধরনের উদ্বেগ জানাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। এর ভেতরে সাধারণ ভোটারদের একটাই চাওয়া-নিজের ভোটটা নিজ হাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারা। এমনই টান টান উত্তেজনার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের একটাই বক্তব্য ‘আরে না, ভয় পাওয়ার কিছু নাই; কিচ্ছু হবে না।’এরইমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে গেছে ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম, ইভিএম মেশিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত করেছে বাড়তি লোকবল। উদ্দেশ্য একটাই, সুন্দর, সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি, কোনও ধরনের চাপ ছাড়াই কাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ।

প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, চতুর্থ ধাপে রবিরার ঠাকুরগাঁও সদর ও রাণীশংকৈল পৌরসভায় অনুষ্ঠেয় ভোট উপলক্ষে দুপুরের মধ্যেই কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে গেছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। কেন্দ্র সাজিয়ে নিচ্ছেন প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা।
নির্বিঘ্নে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে জোরদার করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ২১ টি ভোট কেন্দ্রে ৩ প্লাটুন বিজিবি, ৩টি র‌্যাবের টিম, ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ জন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রতিটি কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ ও আনছার সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। আর রাণীশংকৈল পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রে ১ প্লাটুন বিজিবি, ৩টি র‌্যাবের টিম, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ থাকবেন পুলিশ ও আনছার সদস্যরা ।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে ঠাকুরগাঁও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো ঠাকুরগাঁও সদর পৌরসভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। আর রাণীশংকৈলে ভোট গ্রহণ হবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৬০ হাজার ৭শ’২৪ জন।

এখানে মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত আসনে ৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৫৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং রাণীশংকৈল পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৫শ ২০ জন। এখানে মেয়র পদে ১২ জন, সংরক্ষিত আসনে ১৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটের সরঘ্জাম গ্রহণ করছেন পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তারা


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, রাত পোহালেই সাতক্ষীরা পৌরসভার ভোট। এরই মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শনিবার ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৭ টি কেন্দ্রে এই প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এবার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের শেখ নাসেরুল হক, বিএনপির তাজকিন আহমেদ চিশতি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম ফারুক খান মিঠু ও মো. নুরুল হুদা এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মোস্তাফিজুর রউফ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংরক্ষিত আসনের ১২ জন নারী ও ৫২ জন সাধারণ কাউন্সিলর।

জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার নাজমুল কবির জানান, এবার ভোটার সংখ্যা ৮৯ হাজার ২২৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ এবং পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন।

সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন ৪ জন পুলিশ এবং ৯ জন আনসার সদস্য। এছাড়া তিন প্লাটুন বিজিবি এবং র‍্যাবের তিনটি টিম টহলে থাকবে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, আগামীকাল রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহের ফুলপুর ও ত্রিশাল পৌরভায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীসহ ফুলপুরে ও ত্রিশালে ৯ মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ৮২, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ফুলপুরে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের শশধর সেন (নৌকা), বিএনপি’র মো. আমিনুল হক (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী মো. শাহ্জাহান (জগ), রকিবুল হাসান সোহেল (নারিকেল গাছ) ও এম এইচ ইউসুফ (মোবাইল ফোন)।
এই প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী মো. আমিনুল হক বর্তমান মেয়র এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহ্জাহান এর আগে দুইবার নির্বাচিত মেয়র।
এই পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২২ হাজার ৯৩৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ১৪ জন ও মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৯২০ জন। এ পৌরসভায় ইভিএম ভোটে ৯টি ওয়ার্ডে ১১টি ভোট কেন্দ্রে ৭৬টি কক্ষে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে।
অন্যদিকে ত্রিশালে ১৪ ফেব্রুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদে বর্তমান মেয়র স্বতন্ত্র এ.বি.এম আনিছুজ্জামান আনিছ (জগ), আওয়ামী লীগ প্রার্থী নবী নেওয়াজ সরকার (নৌকা), বিএনপি প্রার্থী রুবায়েত হোসেন শামীম (ধানের শীষ) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী আবুল হাসান হাত পাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ত্রিশাল পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ২৬ হাজার ৮শ ২২ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ২শ’ ৩০ ও মহিলা ১৩ হাজার ৫ শত ৯২ জন ভোটার রয়েছে। ত্রিশাল পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ১৪ টি ভোট কেন্দ্রে ৭৮টি কক্ষে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে।
উল্লেখ্য, ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী এম.এ.এস আলম বাবলুর গত ৩ জানুয়ারি মৃত্যু হলে পুনঃতফসিলে ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়।
জেলা রিটার্নিং অফিসার দেওয়ান সারোয়ার জাহান জাহান, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, বিজিবি, স্টাইকিং ফোর্সসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকবে।

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, রাত পোহালেই চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে চুনারুঘাট পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

(১৪ ফেব্রুয়ারি) রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এর মাধ্যমে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন । পৌর এলাকার মোট ভোটার ১৪ হাজার ৪০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ১১১ জন এবং নারী ভোটার ৭ হাজার ৩৯১ জন। ৯টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রের ৪৬টি গোপন কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বিগত নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

চুনারুঘাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নাজিম উদ্দিন শামছু (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম রুবেল (নৌকা) ও ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী আব্দুল বাছির (হাতপাখা)।

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নাজিম উদ্দিন শামছু ‘বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, বিগত দিনে আমি চুনারুঘাট পৌরসভার জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম, এই এলাকায় আমি অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছি, আমার কাজের মূল্যায়ন স্বরূপ জনগণ পুনরায় আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমি আশাবাদী।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আমাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। পুলিশ আমার প্রচার প্রচারণায় বাধা দিয়েছে, নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল আলম রুবেল ‘বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন- বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের প্রসঙ্গে বলেন,‘আমাকে সমালোচিত করতেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’

ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী আব্দুল বাছির ‘বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, চুনারুঘাট পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভায় রূপান্তরিত করতে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমি আশাবাদী।

হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. সাদেকুল ইসলাম ‘বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, চুনারুঘাট পৌরসভায় ভোটকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, আশা করি সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।

চুনারুঘাট পৌর নির্বাচনে মাইক ছাড়া প্রচারণা করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রার্থীরা।

ভোটের সরঞ্জাম কেন্দ্রে নামাচ্ছেন আনসার ভিডিপির সদস্যরা

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আগামীকাল রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশে প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এছাড়াও থাকবেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের একটি টিম, দুই প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাবের একটি টহল টিম। মাঠে থাকছেন ৩৭৬ জন পুলিশ সদস্য।
এ খবর নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ বদর-উদ-দোজা ভূঁইয়া।
তিনি জানান, ১৭ টি কেন্দ্রের সবগুলোকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়েছে।
৩৭ হাজার ৬৫৬ জন ভোটারের মিরকাদিম পৌরসভার এ নির্বাচনে ৫২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে চারজন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩৭ জন। ১৭টি কেন্দ্রের ১০৪ কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। ইতোমধ্যে ১০৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ২০৮ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সীমানা জটিলতা ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করায় মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতের এই রায়ের ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি এই পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, রবিবার ৪র্থ ধাপে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল পৌরসভার ভোট। এর মধ্যে সোনাইমুড়ীতে ব্যালট ও চাটখিলে ইভিএম এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দু’টি পৌরসভার মোট ১৯টি কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জামাদি পৌঁছানো হয়। সবগুলো কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার দুপুর থেকে সোনাইমুড়ি ও চাটখিল উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে নির্বাচননি সরঞ্জামাদি। এর আগে সকাল ১০টায় সোনাইমুড়ি সরকারি কলেজ মাঠে ও সাড়ে ১১টায় চাটখিল উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রেস ব্রিফিং করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন।

এ সময় পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

দুটি পৌরসভার মধ্যে সোনাইমুড়ি পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট কেন্দ্র ৯টি। মোট ভোটার ২৫ হাজার ২৩২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৮৩৬ ও নারী ভোটার ১২ হাজার ৩৯৬ জন। অপরদিকে, চাটখিল পৌরসভায় মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৮ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট কেন্দ্র ১০টি। মোট ভোটার ২৪ হাজার ৯৩৬ জন। পুরুষ ১২ হাজার ৪৮৫, মহিলা ১২ হাজার ৪৫১ জন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম জানান, ১৯ টি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ৪ জন করে পুলিশ সদস্য ও ৯ জন করে আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্র এলাকায় ১ জন পরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি করে টহল দল থাকবে। এ ছাড়া র‌্যাবের ছয়টি ও বিজিবির আট প্লাটুন সদস্য টহলে থাকবে। ১৯ টি কেন্দ্রের জন্য ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, রবিবার চতুর্থ ধাপে বহুল প্রত্যাশিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার নির্বাচন ইভিএমএর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পৌরসভার ১১টি কেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনের অন্যান্য সরঞ্জামাদি পৌঁছানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটের সামগ্রী পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও পৌঁছেছেন ভোট কেন্দ্রে।
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী ৪জন প্রার্থী, ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জন এবং ৩টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জয়নাল আবেদীন আব্দু (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও সাবেক মেয়র নূরুল হক ভূইয়া-(নারকেল গাছ) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ কর্মী শফিকুল ইসলাম খান-(মোবাইল ফোন)। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ শনিবার বেলা ১১টায় আখাউড়া থানা কম্পাউন্ডে নির্বাচনি ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. রইছ উদ্দিন।
বক্তব্য রাখেন সহকারী পুলিশ সুপার ( বিশেষ শাখা) মো. আলাউদ্দিন, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইও-১) মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ পিপিএম এবং আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী ।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন আব্দু (ধানের শীষ) বলেন, রাতের বেলা পুলিশ প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দেয়। পুলিশের ভয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। সবার মধ্যে মামলা ও গ্রেফতারের ভয়। তিনি বলেন, এখন এজেন্ট খুঁজে পাচ্ছি না। মামলার ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে রাজি হচ্ছে না। বর্তমানে যে অবস্থা দেখছি আমি তো নির্বাচনে এজেন্টই দিতে পারবো না। এছাড়া তিনি আরও বলেন, দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকায় এর প্রভাব তো কমবেশি আছে। তারপরেও নেতা-কর্মীরা পাশে আছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রই আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও সাবেক মেয়র নুরুল হক ভূইয়া (নারকেল গাছ) অভিযোগ করে বলেন, তার কর্মীদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। তারপরও আমি এজেন্ট দিয়ে যাচ্ছি। তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান (মোবাইল ফোন) বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমার আপন ভাইকে গ্রেফতারের পর থেকে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের ভয়ে কেউ আমার কাছে আসতে চাইছেন না। এজেন্ট নিয়ে বিরাট সংকটে আছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন বলে বেড়াচ্ছে, নৌকাকে ভোট দিলেও পাস, না দিলেও পাস।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রাথী ও বর্তমান মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল (নৌকা) বলেন, নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করছে। মানুষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। তিনি বলেন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ সঠিক নয়। নিজেদের সমস্যা ও দোষ অন্যের ওপর চাপালে হবে না।
এ ব্যাপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী বলেন, পুলিশ বিনা কারণে কারও বাড়ি যায়নি। কারও বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলে পুলিশ দায়িত্ব পালনে বের হন।
এ ব্যাপারে নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় ইভিএম মেশিনসহ অন্যান্য নির্বাচনি সামগ্রী প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৮জন আনসার এবং ৩ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পুলিশের পক্ষে ৪টি মোবাইল টিম, ৩টি স্ট্রাইকিং টিম ও ২টি স্ট্যান্ডবাই টিম, ২০ জন এপিবিএন অফিসার ও ফোর্স, ২ প্লাটুন র‌্যাব, ৬ প্লাটুন বিজিবি এবং ১৩২ জন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আখাউড়া পৌরসভায় মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ২৩০ এবং মহিলা ভোটার ১৮ হাজার ৬৭৫ জন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়,পৌর নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে ৪০০ জন অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৮ জন আনসার এবং ৩ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পুলিশের পক্ষে ৪টি মোবাইল টিম, ৩টি স্ট্রাইকিং টিম ও ২টি স্ট্যান্ডবাই টিম থাকবে।
এছাড়াও নির্বাচন উপলক্ষে ২০ জন এপিবিএন অফিসার ও ফোর্স, ২ প্লাটুন র‌্যাব, ৬ প্লাটুন বিজিবি এবং ১৩২ জন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাট জেলায় লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম পৌরসভায় ভোট হবে আগামীকাল। এরমধ্যে লালমনিরহাট পৌরসভায় ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর পাটগ্রামে হবে ব্যালটে ভোট। তবে ভোটগ্রহণের আগেই জেলা সদরে কর্মরত দুই তৃতীয়াংশ সাংবাদিককেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, লালমনিরহাট পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রেজাউল করীম স্বপন ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোশাররফ হোসেন রানা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নির্বাচনের আগের রাতে প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে হয়রানির চেষ্টা করছেন। তবে এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচন। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্র পাঠানো হয়েছে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম। নির্বাচনে ১২ হাজার ৮শ’৯১ জন ভোটারের বিপরীতে মেয়র পদে ৪ জন, ৯টি কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন এবং সংরক্ষিত ৩টি নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১০ জন পুলিশ সদস্য ও ৯ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন তরবেন। এছাড়া ২ প্লাটুন বিজিবি, ৬ টি মোবাইল টিম ও ৫টি র‌্যাবের টিম মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে গ্রহণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার দাবি করেছেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার আবদুর রশিদ।
১৯৯৭ সালে কলাপাড়া পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর সর্বশেষ চতুর্থ বারের মতো ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর কলাপাড়া পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় ভোট হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে রাতে। বিগত তিনটি ধাপসহ চলমান পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সংঘাত কমাতে নানা উদ্যোগও নিয়েছে। ডিসি, এসপি, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। সহিংসতার কারণে কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্তত ১২টিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, রাত পোহালেই ভোট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা পৌরসভায়। শুক্রবারই শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রচার- প্রচারণা। রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ শনিবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ভোটের সরঞ্জাম। রিটার্নিং অফিসার রাজু আহমেদ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তিন শতাধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। 

৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রের ৫৫ বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, এর জন্য ৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫ জন অ্যাসিসট্যান্ট প্রিজাইডিং অফিসার, ১১০ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, এবারই প্রথমবারের মতো রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান। পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম।

৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রের ৫৫ বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, ৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে র‌্যাব।

রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ জন, কাউন্সিলর পদে ৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ৬২ হাজার ৯১৩ জন।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, চতুর্থ দফায় কুমিল্লার দাউদকান্দি ও হোমনা পৌরসভায় রাত পোহালেই ভোট গ্রহণ শুরু হবে। এই দুই পৌর নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা তারা তাদের শেষ সময়ের প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন। কিন্তু ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটের দিন সকাল পর্যন্ত ভোটারা তাদের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখছেন। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে দাউদকান্দি ও হোমনা পৌরসভায় মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, চায়ের দোকান, হাট-বাজার ও পাড়া মহল্লায় সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। আজ (১৪ ফেব্রুয়ারি) ইভিএম পদ্ধতিতে এ দুটি পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। দাউদকান্দি ও হোমনা পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দাউদকান্দি পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে তিন প্রার্থী হচ্ছেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নাঈম ইউসুফ সেইন, বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি নুর মোহাম্মদ সেলিম সরকার ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ আবু মুছা নারিকেল গাছ মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
হোমনা পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থীরা হচ্ছেন, নৌকার মনোনীত মেয়র প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র ও হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল লতিফ ধানের শীষ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি আবদুল হাকিম হাত পাখা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চতুর্থ দফায় রবিবার কুমিল্লার দাউদকান্দি ও হোমনা পৌরসভা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগের সদস্যরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন। ইভিএম পদ্ধতিতে এ দুটি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ইসি আশা করছে, সামনের নির্বাচনগুলোতে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটবে না। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে এমন আশা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য দুই কমিশনার। ওই অনুষ্ঠানে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন,‘আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি আছে। কমিশনের ব্যবস্থাপনার দিক থেকে যা যা দরকার, সেগুলো ঠিকঠাক করেছি। আমি আশা করি, এরপর থেকে ভোটগুলো সুষ্ঠু হবে, রক্তপাত হবে না।’

গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সকল পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সব মিলিয়ে রবিবার ৫৫টি পৌরসভায় ভোট হতে যাচ্ছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে প্রাণ দিলেন পার্লারের মালিক
কোটি টাকার সোনা ভারতে পাচারের সময় একজন আটক
ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, সাতক্ষীরা মেডিক্যালের হল বন্ধ ঘোষণা
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন