X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এগিয়ে যাবো

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:২২আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:২২

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
টেলিভিশন, সিনেমার পর্দায় হরহামেশাই শত্রুতাকে মিত্রতায় পরিণত হওয়ার গল্প-কাহিনি দেখা যায়। যা দর্শক আকাঙ্ক্ষা এবং বাণিজ্যিক চলের ফলাফল। কিন্তু বাস্তবতা বড় ভিন্ন। যদিও এও সত্য, এটা বহুলাংশে নির্ভর করে পুষিয়ে নেওয়ার কিংবা আক্রান্তের ক্ষয়ক্ষতির ওপর। সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে এমন অস্থিরতা নির্মাণের যৌথ বর্বরতা দৃশ্যমান। যেখানে পুরনো পরাজিত শত্রুরা প্রোপাগান্ডা নির্ভর তথ্যাদির সমন্বয় এবং সন্ত্রাস সর্বস্ব যৌথ তৎপরতা নিয়ে হাজির হয়েছে। ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে।

দেশের সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার নিয়ে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যা কোনও দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার শামিল। কাতারভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আল-জাজিরা তার নিজের দেশের রাজতন্ত্রকে বুকে নিয়ে আরেক দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেমেছে! বিষয়টি এমন যে ‘চালুন সুঁইরে (সুচ) কয় তোর তলা ফুটা’। যদিও দুর্বল সিনেমাটোগ্রাফি এবং তথ্যের কারণে এসব যে শুধুই তামাশা এবং ষড়যন্ত্র মাত্র সেটা সর্বত্র ধরা পড়ে গেছে।

নানা মত-পথ যেমন গণতন্ত্রের সৌন্দর্য তেমনি বিরোধী দলও গণতন্ত্রের দর্পণ। যদিও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে দেশের বিরোধী দল বিএনপি নিজেদের দুর্নীতি, সর্বক্ষেত্রে মাদকের চল, জাতির আজন্ম শত্রু যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গড়া দল জামায়াতের সাথে যৌথ মিত্রতায় জনগণ বিচ্ছিন্ন দল হিসেবে জনপদ ও জনপথে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ফলাফল বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত দল ও গোষ্ঠীসমূহ নতুন নতুন কৌশলে বাংলাদেশকে আক্রান্ত করবার পাঁয়তারায় নেমেছে।

যার প্রমাণ মুসলিম বিশ্বের সেক্যুলারিজম ও সংহতি ধ্বংসকারী আল কায়েদার মতো দেশি-বিদেশি মদত ও অর্থায়নে গোঁজামিল সর্বস্ব ভিডিওচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আল-জাজিরার পুরো ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নয়; বরং এর দুই একটি বিষয় নিয়ে বললেই মিথ্যাচারের মাত্রাতিরিক্ততা স্পষ্ট হয়। যেমন ২০১৪ সালে বিজিবি প্রধান জেনারেল আজিজ নাকি বিরোধী দলকে দমন করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে সহায়তা করেছেন। যা শুনে পাগলও মাতাল বনে যাবে। কারণ, ২০১৪’-তে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জন করেছিল। অর্থাৎ নির্ধারিত খেলায় দুই পক্ষের এক পক্ষ যেমন অংশগ্রহণ না করলে আরেক পক্ষ ওয়াকওভার পায় সেটাই হয়েছে।

তাছাড়া ফ্রিডম পার্টির নামের যে নামসর্বস্ব দলকে বিরোধী দল তকমা দিয়েছেন তাও হাস্যকর। কারণ, প্রথমত বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারী কর্নেল ফারুক, রশিদরা মিলে যে দলটি প্রতিষ্ঠা করেছে, তাকে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করবে এটাই বাস্তবতা। তাছাড়া জাতির পিতার খুনিরা বিচারের আওতায় না এসে কী করে রাজনীতি-দল করে ফেলে সে প্রশ্নও আল-জাজিরা করেনি। করলে তাদের লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে যাবে সেটাও একটা কারণ।

তাছাড়া ১৯৯৬ সালে ফ্রিডম পার্টির গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসী মোস্তফা মৃত্যুর আগে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বয়ান দিয়েছিলেন, ‘হারিস আমাকে তাঁর লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে প্রথমে গুলি করে’। এখানেই মূল গিমিক। একজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি কী করে বলেন তাকে যে বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়েছে সেটা লাইসেন্সকৃতই। আবার মোস্তফা বলেছেন, ‘হারিসের পর জোসেফ আমার কোমর থেকে পিস্তল নিয়ে আমার পেটে গুলি করে’। আল-জাজিরা কিন্তু এই প্রশ্ন তোলেননি যে মোস্তফা কোমরে বন্দুক নিয়ে প্রকাশ্যে বেড়াবার লাইসেন্স কোথায় থেকে পেয়েছিল। তাছাড়া ওই জবানবন্দিতে তার স্বাক্ষরও ছিল না। কাজেই এটা যে তৎকালীন ক্ষমতার ফলাফল এটা বুঝতে বেগ পাবার কথা নয়।

তাছাড়া তৎকালীন সময়টায় এই ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরাই পিতা মুজিবের মতো কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালিয়েছিলেন। দলের কর্মীরাই তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। আর এ কারণেই যারা তাদের পাকিস্তানপন্থী পথের কাঁটা অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় বাধা হয়েছিলেন তাদেরই মামলা-জেলের খড়গ প্রয়োগ করা হবে সেটাই স্বাভাবিক। এটাই প্রকৃত বাস্তবতা।

তবে এসব ষড়যন্ত্রের একটা বিশেষ দিক হলো বাংলাদেশ বাস্তবিক অর্থেই ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং সমৃদ্ধির পথে দুরন্ত গতিতে ছুটছে। এসব ষড়যন্ত্র তারই প্রমাণ। কারণ, ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চার নিয়ে কখনই অন্যেরা মাথা ঘামায় না। বরং মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে যখন কেউ সামনের দিকে এগোতে থাকে তাকেই পেছনের জন ঈর্ষায় এবং সামনের জন হিংসায় নানা কৌশলে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা তারই প্রমাণ। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান এবং জনগণের এগিয়ে চলা যার সাক্ষ্য।

যার আরেক চক্রান্তমূলক দৃষ্টান্ত জাতিসংঘের বরাতে অপপ্রচার চালাচ্ছে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা হরণকারী ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সেন্টিমেন্টে আঘাত করে সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করবার পাঁয়তারা করছে।

বিশদ দৃষ্টিভঙ্গিতে দাঁড়ায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জনগণকে দুই মেরুতে রেখে সরকারকে আক্রমণ করে উগ্রতা-উসকানি সম্পন্ন সরকার ব্যবস্থা চালু করবার চেষ্টা। অর্থাৎ ডিভাইড অ্যান্ড রুলস পলিসি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গৌণ করে সেই অর্থকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ রুখতে অস্ত্র কিনতে ব্যবহার করানো। যাতে তৈরি হবে অস্ত্র বিক্রির বাজার এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া। কারণ, বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার বাংলাদেশ এখন শুধুই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার পাওয়ার ফ্যাক্টর।

তবে এক্ষেত্রে দেশের এবং দেশের বাইরে যে অংশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তাদের চরিত্র এবং রক্তের ধারাবাহিকতাও জনগণের সামনে নিরীক্ষণ দৃষ্টিতে তুলে ধরা জরুরি।

এই বিষয়গুলোকে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী শ্রেণির তুলে ধরা জরুরি। কারণ, প্রবাদ আছে একটি মিথ্যাকে শতবার সত্য বলে প্রকাশ করলে তা সত্যের মতোই শোনায় বা দেখায়। সেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে যেকোনও বিষয় আরও দ্রুত ছড়ায়। আর সেটা যদি হয় তামাশা, ভাঁড়ামো কিংবা চক্রান্ত তাহলে তো কথাই নেই। কাজেই দেশবিরোধী এসব চক্রান্তের বিষয়কে খোলাসা করে উপস্থাপন করা জরুরি।

পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যে একক এবং অভিন্ন সেটাও আরও পরিণত করে প্রকাশ জরুরি। কারণ, তখনই সম্ভব যেকোনও ষড়যন্ত্র এবং সাফল্যকে ঈর্ষার কারণ থেকে গৌরবের উচ্চতায় পৌঁছানোর।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

[email protected]

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ