X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫৪ বছরে পা রাখলেন এ আর রাহমান

বিনোদন ডেস্ক
০৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৯আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৩৭

১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মেছিলেন এ এস দিলীপ কুমার নামের এক শিশু। বাবা তামিল সংগীত পরিচালক আর কে শেখর এবং মা গৃহবধূ কস্তুরি দেবী। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারায় সে কিশোর। ঝোঁক চলে যায় প্রযুক্তির দিকে। কিন্তু ধমনীতে যে তার সুর; সেটাই যেন হৃৎপিণ্ডে জড়ো হতে থাকে। মোড় ঘুরে চলে আসেন সংগীতেই। তৈরি হয় এ আর রাহমান নামের এক সংগীত অধ্যায়!

যিনি বিশ্ব সংগীতের তারকাদের তারকা। এই মহাতারকা আজ (৬ জানুয়ারি) ৫৪ বছরে পা দিলেন।

এ আর রাহমানের জীবনে বেশ কিছু ঘটনা খুব বেশি প্রভাব ফেলে। তার মধ্যে আছে শৈশব, ধর্মান্তরিত হওয়া ও বলিউডে যাত্রা।

ছোটবেলায় ৪ বছর বয়সেই তিনি পিয়ানো শিখেছিলেন। ওই সময় থেকে তার ঝোঁক চলে যায় ইলেকট্রনিকসের প্রতি। তবে বাবা যখন একটি মিউজিক সিনথেসাইজার কিনে আনেন, তখন সংগীতের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়।

বিস্মিত ছোট্ট দিলীপ এই যন্ত্রে পেয়ে যায় সুর আর প্রযুক্তির স্বাদ!

এর পরের জীবনটা তার জন্য ছিল কষ্টের। বয়স যখন ৯ বছর, তখন হঠাৎ বাবা মারা যান।
তার মৃত্যুর পর বালক দিলীপের ওপর পরিবারের আর্থিক দায়ভার নেমে আসে। বাবার দেখানো পথ ধরেই সংগীতকে আঁকড়ে ধরেন। বাবার গানের বাদ্যযন্ত্র এবং শব্দযন্ত্রগুলো ভাড়া দিয়ে কোনোভাবে দিন কাটছিল তাদের। মা কস্তুরী বহু কষ্টে বড় করেন তাদের। ১১ বছর বয়সে কি-বোর্ড শিল্পী হিসেবে ইলিয়া রাজার দলে যোগ দেন। বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন চেন্নাইভিত্তিক রক ব্যান্ড ‘নেমেসিস অ্যাভিনিউ’।

সংগীতে এ আর রাহমানের হাতেখড়ি ওস্তাদ ধনরাজের হাত ধরে। দ্রুত ভোকাল, গিটার, পারকাশন, ড্রাম, ফিঙ্গার বোর্ড, কিবোর্ড, পিয়ানো, অ্যাকর্ডিয়ন, ড্রামস প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে পারঙ্গম হয়ে ওঠেন। মাদ্রাজে পড়ালেখা করার সময় স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল মিউজিকে ডিপ্লোমা করেন তিনি।

১৯৮৪ সালে এ আর রাহমানের ছোট বোন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনকার একটি ঘটনা তার মনোজগৎ ওলট-পালট করে দেয়। ১৯৮৮ সালে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ধর্মান্তরিত হন ২৩ বছরের দিলীপ। নামও পরিবর্তিত করে হয়ে যান আল্লাহ রাখা রাহমান, সংক্ষেপে যা এ আর রাহমান।

এর কিছু দিন পরই শুরু হয় তার বলিউড যাত্রা। ১৯৯২ সালে তামিল পরিচালক মণিরত্নম একটি কফির বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলসে সুর দিয়ে মাতিয়ে দেওয়া ছেলেটিকে সুযোগ দিলেন তার ‘রোজা’ ছবির সংগীত পরিচালনার। হিন্দি ও তামিল ভাষায় ‌‘রোজা’র সবক’টি গান দারুণ হিট হয়। কিন্তু মজার বিষয় হলো, আর দশজন তামিল ছেলের মতোই এ আর রাহমান হিন্দি ভাষা বুঝতেন না। আর সে কারণেই অন্য ভাষায় কাজ করতে চাইতেন না।

বিশেষ করে ‘রোজা’ ছবিটি এবং এর গানের সুর যখন সর্বভারতে সুপারহিট, তারপরও চেন্নাই ছেড়ে বলিউডে আসার কোনও পরিকল্পনা করেননি তিনি।

তবে পরিচালকরা যেন পেয়ে যান সাত রাজার ধন। তাই এ আর রাহমানের কথা চিন্তা করেই তৈরি হয়েছে অনেক সিনেমার পাণ্ডুলিপি।

তেমনই একজন রামগোপাল ভার্মা। তিনিও নাছোড়বান্দা। ‘রঙ্গিলা’র জন্য তারও রাহমানকেই চাই। অনেক কাঠখড় পুরিয়ে রাজি করান এ আর রাহমানকে। ১৯৯৫ সালে এলো ‘রঙ্গিলা’। বলাবাহুল্য, এটাও সুপারহিট। মূলত এ ছবির মাধ্যমেই বলিউডে ভিত গড়েন এই সংগীত তারকা।

এরপর সমানতালে দক্ষিণী ও বলিউডে কাজ করেছেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৫০ বছর উপলক্ষে ‘বন্দে মাতরম’-এ নতুন করে সুর দেন রাহমান। ‘মা তুঝে সালাম’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন, মিউজিক ভিডিওতে দেখা যায় তাকে। সেখান থেকে তার ক্যারিয়ারের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হলিউডেও পৌঁছে যান এ আর রাহমান। জয় করেন অস্কারও।

১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ আর রাহমান তামিল, তেলেগু, হিন্দি, মালয়ালাম, মারাঠি, কন্নড়, ম্যান্ডারিন ও ইংরেজি ভাষায় দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ২০০-এর বেশি গান ও অ্যালবাম।

২০০৯ সালের ৮১তম অস্কার আসরে ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়র’ সিনেমার জন্য মিউজিক কম্পোজার হিসেবে সেরা অরিজিনাল মিউজিক স্কোর ও সেরা অরিজিনাল সং ‘জয় হো’ গানের জন্য ডাবল অস্কার জেতেন তিনি। ২০১০ সালে ‘পদ্মভূষণ'-এ সম্মানিত হয়েছেন এ আর রাহমান।

সর্বশেষ গত বছর এই কিংবদন্তি কাজ করেন বাংলাদেশের জন্যও। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশি গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের কথায় তৈরি করেন হিন্দি ও বাংলা ভাষায় দুটি বিশেষ গান। যেটি প্রকাশ পাবে শিগগিরই।

স্টুডিওতে এ আর রাহমান ও জুলফিকার রাসেল জেনে নিন এ আর রাহমানের কিছু অজানা তথ্য:

১. ছোটবেলায় এ আর রাহমানের ইচ্ছে ছিল ইলেকট্রনিকস অথবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। বাবার আনা সিনথেসাইজারই তার জীবন পাল্টে দেয়। গান ও টেকনোলজি উভয়ের সম্মিলন হয় যার মাধ্যমে।

২. একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন তার মা কারিমা তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনেন এবং গানের চর্চা শুরু করার উৎসাহ দেন। এ আর রাহমানের মতে, ‘মা জানতেন সংগীতই আমার সবচেয়ে ভালো পেশা হতে পারে। এটা তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।’

৩. এ আর রাহমান ও তার ছেলে আমিন শারেসের জন্মদিন একই দিনে, ৬ জানুয়ারি।

৪. ২০১৩ সালে কানাডার মারখামের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় এ আর রাহমানের নামে ।

৫. ২০০০ সালে এ আর রাহমানের জিঙ্গেলে একটি ফরাসি বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল জিনেদিন জিদানকে!

৬. অস্কারজয়ী ‘জয় হো’ গানটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল সালমান খান অভিনীত ‘যুবরাজ’ সিনেমার জন্য। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটি হলিউডের ‘স্লামডগ মিলিওনিয়র’-এ ব্যবহার করা হয়।

৭. বিশ্বের সবচেয়ে ডাউনলোডকৃত গানটি এ আর রাহমানের সুর করা। এটি হলো এয়ারটেলের রিংটোন। প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বার এটি ডাউনলোড করা হয়েছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

/এম/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!