X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেখা হোক একুশের বইমেলায়

তুষার আবদুল্লাহ
১২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৫১আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:০৯

তুষার আবদুল্লাহ শৈত্যপ্রবাহের মতোই দেশজুড়ে বইছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় আফাল বা জল তরঙ্গ। আসলেই দ্বিতীয় ঢেউ কিনা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে, এর আগেই দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে চলে গেছে। অথবা ইউরোপ-আমেরিকায় যে আকারে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে, তেমনটা এখনও এসে পৌঁছেনি, তবে গত একমাসে নিকটজনদের যেভাবে আক্রান্ত হতে দেখছি, যেমন করে তারা চলে গেলেন, তাতে বলতে দ্বিধা নেই, আগের চেয়ে এবারের ছোবল আরও তীক্ষ্ণ, তীব্র। তবে ৮ মার্চ আর ডিসেম্বরের তফাৎ বিস্তর। তখন একজনের মৃত্যু সংবাদেই শহর রূপ নিয়েছিল সান্ধ্য আইনের নীরবতায়। দেশজুড়ে ঘোষিত হয়েছিল সাধারণ ছুটি। হাসপাতালসহ সকল সেবা খাতে দেখা দিয়েছিল ছন্দপতন। জীবন ও জীবিকা পৌঁছে ছিল মুমূর্ষুতার হিমঘরে। সাধারণ ছুটিমুক্ত হওয়ার পর বিদ্যায়তন ছাড়া সর্বত্রই যেন অতি স্বাভাবিক চাঞ্চল্য চোখে পড়ে। মাছ বাজার থেকে শুরু করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিপণিবিতান। ফুটপাত, চায়ের টঙ, অভিজাত রেস্টুরেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র, সামাজিক অনুষ্ঠান, গণপরিবহন–সবই ভিড়ে ঠাসা। উপচে পড়া ভিড়ের কমতি নেই সরকারি বুলেটিনে মৃতের সংখ্যা ৪০ পেরোনোর পরও। পাশের মানুষটি চলে যাওয়ার পরও সেই মার্চ, এপ্রিল, মে’র সতর্কতা নেই আমাদের যাপনে। জীবিকা সচল রাখতে হবেই। করোনার অজুহাতে কঠিন বাস্তবতায় যেমন কাজ হারাতে হয়েছে অনেক মানুষকে, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান করোনাকে শুধু ছুঁতো হিসেবেই নিয়েছে। তারপরও জীবন চক্র সচল রাখার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য খাতের নানা সমন্বয়হীনতার মাঝেও, মাস্ক ব্যবহারে সরকারের প্রশাসনিক কঠোরতার ইতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে। এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে,সবই যখন স্বাভাবিক, তখন বিদ্যায়তন নিয়ে কেন অস্বাভাবিকতা? কই পথে ঘাটে, মার্কেটে, রেস্টুরেন্টে, বিনোদন কেন্দ্রতে তো ঠিকই শিক্ষার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুরোধ ছিল, যেন শিক্ষার্থীদের ভিড়ের মাঝে না নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমরাতো অনুরোধ রাখতে শিখিনি। তাই প্রয়োজন ছিল একাধিক ধাপ তৈরি করে, পাঠ্যক্রম ছোট করে নিয়ে এসে বিদ্যায়তন চালু রাখা। অনলাইন ক্লাসে সবাই সমানভাবে পাঠ গ্রহণ করতে পারছে, তাও নয়। বরং বাড়ছে মুঠোফোন আসক্তি। আসলে সমস্যা হলো আমরা গুছিয়ে কোনও পরিকল্পনা করতে পারছি না। আমাদের সহজ ব্যবস্থাপত্র হলো স্থগিত বা বন্ধ করে দেওয়া।

 

এখন যেমন ভাবা হচ্ছে বা প্রস্তাব পাখা হয়েছে একুশের বইমেলা স্থগিত করার। চীনের উহানে আবির্ভাব হওয়া কোভিড-১৯ যখন চীন কাবু করে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছিল, তখন ঢাকায় চলছিল একুশের বইমেলা। মেলা মাঠে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা হচ্ছিল করোনা নিয়ে। কেউ তুখোড় ধুলোর মাঝেও সহজে কাশতেন না। মাঠে ভিনদেশি কাউকে দেখলেই দূরে সরে যেতেন অন্য দর্শনার্থীরা। এর মধ্যেই বেশ গোছালো মেলা হয়েছিল ২০১৯ সালে। আমাদের এখানকার বই প্রকাশের রেওয়াজ এখনও একুশে বইমেলা কেন্দ্রিক। আগস্টের শুরু থেকে লেখক প্রকাশকেরা আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেন। বই বিক্রির ব্যাপারটিও চলে বছরজুড়ে। কিন্তু গত বইমেলা শেষ হওয়া মাত্র কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া, সাধারণ ছুটি, সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ থাকা, বিদ্যায়তন বন্ধের কারণে ২০১৯ এ প্রকাশিত বই এখনও অনেকে গুদাম থেকে বের করতে পারেনি। বড় পুঁজির ও কিছু প্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম ও ছোট প্রকাশক এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাকি সিংহভাগই লোকসান ও বিপর্যয়ের মুখে আছে। এই বাস্তবতায় আগস্ট থেকেই আলোচনায় আসতে থাকে ২০২১-এর বইমেলা। বইমেলা হবে, নাকি হবে না? অবয়বপত্রে মাস দুই আগে থেকেই নতুন বই লেখা ও প্রকাশের ঘোষণা আসতে দেখছি, কেউ কেউ অগ্রিম বিক্রয় বা প্রি অর্ডার নিতে শুরু করেছে। কিছু বই প্রকাশও হয়ে গেছে। তবে এই সংখ্যা নগণ‌্য। সকল ছোট বড় প্রকাশকই ২০২১ সালের বইমেলার অপেক্ষায়। তবে কতিপয় বড় বা প্রভাবশালী প্রকাশক বইমেলা না হওয়ার পক্ষে। তাদের অনেকেই এই ব্যবসার অবসর প্রান্তে। তাদের উত্তরাধিকাররা এই ব্যবসায় আসতে চান না। কারও কারও সরবরাহ কাঠামো এতো দৃঢ় যে, মেলা মাঠে না গড়ালেও ক্ষতি নেই। ক্ষতি তাদের, যারা মধ্যম ও ছোট আকারের প্রকাশক এবং নবীন। গত প্রায় এক দশকে নবীন প্রকাশকরা, প্রকাশনা শিল্পে বিপ্লব এনেছে, একথা মানতেই হবে। বইমেলা না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মেলা যদি মাঠ অবধি না যায়, পরাবাস্তব অবস্থায় থাকে, তবে বই প্রকাশের সংখ্যাও কমে যাবে। কারণ ১২ আনা প্রকাশক অনলাইন বিপণনে সিদ্ধহস্ত হতে পারেনি। অনেকের ওয়েবসাইটও নেই। ক্রেতাদেরও কয়জন অনলাইনে কেনার অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে? তাই মেলা কেন্দ্রিক যে অর্থনৈতিক চক্র সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই মন্দাকালে।

বইমেলা মাসব্যাপী হতেই হবে এই সংকটকালে এমন নয়। সংক্ষিপ্তভাবেও করা সম্ভব। পৌষ, মাঘে শীতের তীব্রতা এড়াতে ২১ ফেব্রুয়ারিতেও মেলা শুরু করা যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৭ মার্চ এই ১৫ দিন জমজমাট মেলা করা সম্ভব। এতে মুজিববর্ষের শেষলগ্ন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপনের শুরুর লগ্ন স্পর্শ করা হবে। অবশ্যই মেলার স্টল বিন্যাস, গেইট এমন নকশা স্বাস্থ্য বান্ধব হতে হবে। পাঠক, দর্শনার্থী প্রবেশ, স্টলের সামনে অবস্থানকেও স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব অনেকটাই। দরকার শুধু সমন্বিত পরিকল্পনা নকশা তৈরি। সেই নকশাকাররাও তৈরি ২০২১ মেলা আয়োজনে অংশ নিতে। তাই আশা ছাড়ছি না, যে সীমিত-সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও দেখা হোক একুশের বইমেলায়।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
চুক্তিতে না থাকলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার আশা স্টয়নিসের
চুক্তিতে না থাকলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার আশা স্টয়নিসের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ