X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

গির্জার ধর্মীয় বোধ, বাঙালির ঈদ

দাউদ হায়দার
২৬ মে ২০২০, ১৫:৩৯আপডেট : ২৬ মে ২০২০, ১৭:৩৮

দাউদ হায়দার মসজিদে নয়, বার্লিনের একটি বড় গির্জার দ্বার উন্মুক্ত, ইফতারির আগে ও পরে রোজদার ঢুকছেন প্রার্থনার জন্যে, অবশ্যই মুসলিম প্রার্থনা, সমাবেশ। গির্জার প্রধান দরজায় দাঁড়িয়ে যাজক, তিনটি নারী (গির্জার প্রিস্ট তথা ধর্মযাজক নারী), স্বাগত জানাচ্ছেন, ‘আসুন। ঈশ্বরের সব ঘরই সব মানুষের জন্যে। আমরা আপনাদের, আমরা মানবসত্তায় এক, একক। মানুষ-মানুষে ভেদাভেদ নেই। মানবতায় ঈশ্বরের ভেদাভেদ নেই। ধর্ম যে নামেই হোক।’
এই ছবি জার্মান মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারিত (জার্মান বেতার তরঙ্গ ‘ডয়েচে ভেলে’-তেও), দেখে বলছেন অনেকেই ‘করোনার মাহাত্ম। করোনা জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষকে একত্রিত করছে, সাম্যবাদী দুনিয়ায় করোনার ভূমিকা নেপথ্যে। করোনাভাইরাস ধর্মাধর্ম বিচার করে না।’ যারা বলছেন, ধর্মের পরিচয়ে নয়, প্রত্যেকে মানুষ। কেউ খ্রিস্টান, কেউ ইহুদি, কেউ মুসলিম, কেউ শিখ, কেউ হিন্দু, কেউ নাস্তিক, কেউ আস্তিক।

‘সব ধর্মের ঘরদুয়ার সব মানুষের জন্যে খোলা রাখাই ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ, তাঁর কাছে মানবকল্যাণের প্রার্থনাই আমাদের আত্মচেতনার বিকাশ। আঁধার দূর হয়ে আলোকিত বিশ্ব এবং মানবতার সূর্য জাগ্রত, অমলিন।’

গির্জার যাজকের ‘বাণী’ শুনতে অনেকের ভিড়, কথাগুলো যদিও খ্রিস্টিয় ধর্মীয় নেতা পোপের, কিন্তু করোনাকালে, রোজার সময়ে ‘বাণীর তাৎপর্য আরও বেশি বৈশ্বিক মানবতায় পূর্ণ। বার্লিনের নারী ধর্মযাজক এখন মাতা মেরির চেয়েও মা জননী। তাঁকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে ভিড়।

করোনার কারণে মসজিদে মুসলিমদের সমাগম কম, তারাবি নামাজেও জনসংখ্যা সামান্য। নামাজে দূরত্ব বজার রাখা পয়লা শর্ত। সালাম দেওয়াও দুই মিটার দূর থকে। কোলাকুলি নিষেধ।

বার্লিনে দুই মসজিদ, বাংলাদেশিদের। সমস্যা, ইফতারির আগে-পরে একত্রিত হওয়া আগের মতো নয়। করোনার কারণে। বাঙালিরা মানতে বাধ্য। না-মেনে উপায় নেই।

বার্লিন সহ জার্মানি, ইউরোপে ভারত উপমহাদেশীয়দের দু’টি ঈদ। মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকা সৌদি আরবের ঈদের দিনক্ষণ মানে, যেমন, আমাদের দেশের এবার সোমবার ঈদ, আরব-ইউরোপে রবিবার। সবটাই চাঁদ নির্ভরশীল। এক মাসের রোজারও।

ইউরোপের বাঙালি তথা ভারত উপমহাদেশের মুসলিমদের দুই ঈদ সৌদি এবং দেশীয় কালচারে (তাও চাঁদ নির্ভরশীল)।

দুই দিনই ঈদের অনুষ্ঠান, নামাজ বাদে।

এখানেও ভিন্ন কালচার এবং দেশিয় কালচার। দুই কালচার একত্রে উদযাপিত নয়। আরবীয় ঈদ ধর্মীয়, কিন্তু দেশীয় কালচারে (দেশে ঈদ) ধর্ম ও আনুষ্ঠানিকতা যুগপৎ। সামাজিক সম্মিলন। মেলামেশা। খানাপিনা। এর-ওর বাড়িতে যাতায়াত, যেমন হয় দেশে।

এই ট্রাডিশনে লক্ষ করি, বাঙালির সামাজিক সম্পর্ক দেশীয় কালচারে নিবিড়, মাসের পর মাস দেখা না হলেও ঈদ উপলক্ষে ঘরোয়া। দেশকে কাছে পাওয়া, দেশীয় মানুষ, দেশীয় ভাষার একাত্মতাও সঘন। নির্বাসনের কালচার, আইডেনটিটির কালচার।

দেশজ কালচার। নিজেকে ধর্ম-কালচারে প্রকাশ।

‘বাঙালির কালচারে দুটি সত্তা, ধর্ম ও দেশীয় সত্তা’, ডক্টর আহমদ শরীফ এরকমই বলেছেন একটিই লেখায়। এই দুই সত্তায় বাঙালি মুসলিম অবিভাজিত, ঈদেও প্রমাণিত।

এই প্রমাণে নিজস্বতা যেমন, ধর্মেও। ঈদ উপলক্ষ। এখানে মানবিকতাও।

রোজার প্রার্থনা উপলক্ষে বার্লিনের গির্জার যাজক আরও বলেছেন, ‘সব ধর্মে, কালচারে মানবতাই আত্মিকতার জয়গান।’

কে একজন বললেন, ‘যতই বলুক, ঈদে পোলাও-বিরিয়ানি-কোর্মা নেই, ধ্যেৎ। জার্মানরা খেতেও জানে না।’

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ