X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণস্বাস্থ্যের অপরীক্ষিত করোনা শনাক্তের কিট নিয়ে জটিলতা কেন?

মোহাম্মদ এ. আরাফাত
২৬ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৪৬আপডেট : ০১ মে ২০২০, ১৩:২১

মোহাম্মদ এ. আরাফাত যেকোনও নতুন আবিষ্কারই আমাদের উৎসাহিত করে। বিশেষ করে সংকটকালে তা আরও আশাব্যঞ্জক। তবে আবিষ্কৃত উপাদানটি সঠিক কিনা বা মানুষের উপকারে আসবে না বিপদ বাড়াবে, সেজন্য সবসময় কিছু সাবধানতামূলক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। গণস্বাস্থ্যের করোনাভাইরাস টেস্ট কিটের কাজ এখন যে পর্যায়ে আছে সেখান থেকে দেশের আইন অনুযায়ী তাদের আরও কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এবং তা করতে হবে মানুষের কল্যাণের স্বার্থেই।
(১) প্রথম ধাপ: উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান (এক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্য) আইন অনুযায়ী একটি থার্ড পার্টি Contract Research Organization বা CRO-এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি-সহ মোট নয়টি এমন থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান (CRO) আছে।
(২) দ্বিতীয় ধাপ: (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আগে) উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান, CRO-কে সঙ্গে নিয়ে প্রটোকল (Protocol) প্রস্তুত করে পাঠাতে হবে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (BMRC)-এর ন্যাশনাল রিসার্চ এথিক্স কমিটিতে।

(৩) তৃতীয় ধাপ: ন্যাশনাল রিসার্চ এথিক্স কমিটির অনুমোদনের পর সেখান থেকে অনুমোদিত প্রটোকলটি যাবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অ্যাডভাইজরি কমিটিতে।

(৪) চতুর্থ ধাপ: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদনের পর, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হবে, যা আইন অনুযায়ী হতে হবে একটি থার্ড পার্টি বা CRO-এর মাধ্যমে। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি-সহ মোট নয়টি এমন থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান (CRO) আছে, যা আগেই উল্লেখ করেছি। এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মানেও কিন্তু অনুমোদন না।

(৫) পঞ্চম ধাপ: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সব ধাপ সম্পন্ন হলেই কেবল চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে।

(৬) ষষ্ঠ ধাপ: তারপর সফলতা সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন আসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি থেকে।

অর্থাৎ, উল্লিখিত ধাপগুলো সম্পন্ন না করে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে কিট হস্তান্তরের কোনও সুযোগ নেই। উল্লিখিত ধাপগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন জনকল্যাণের স্বার্থেই, না হলে মানুষের উপকার হওয়ার থেকে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকবে।
গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নেই। থাকার কথাও না। কারণ, এই কিট সফল হলে সরকারেরই লাভ। সরকার বরং প্রথম থেকেই কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে সব বিষয়েই অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে। গণস্বাস্থ্য ভালো কিছু তৈরি করবে, তা বিশ্বাস করেই সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল।
তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। প্রথমত, পুরো বিশ্বে এখন Rapid Testing Kit নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, তার খবর আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি। Rapid Testing Kit ব্যাপক হারে ভুল ফলাফল দেয়। টেস্ট কিট ভুল ফলাফল দিলে রোগ সংক্রমণের হার বহুগুণে বেড়ে যায়, যে কারণে WHO এখন পর্যন্ত Rapid Testing Kit-কে স্বীকৃতি দেয়নি। পৃথিবীর বহু দেশ Rapid Testing Kit কিছু ব্যবহার করলেও দ্রুতই সরে এসেছে।
গণস্বাস্থ্যের কিটটি Rapid (antibody)Testing Kit হলেও দাবি করা হচ্ছে, এর ফলাফল PCR test-এর ফলাফলের কাছাকাছি। এখন আবার বলা হচ্ছে এই কিট নাকি antigen পরীক্ষা করবে। যদিও এ বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞের সন্দেহ আছে।
গণস্বাস্থ্যের এই দাবি কতটুকু সত্য তা জানার জন্যই এই কিটটি পরীক্ষা করা দরকার। সরকার তো পরীক্ষা করার কথাই বলছে। সরকার যেটা বলছে তা হলো পরীক্ষা করার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে, যা গণস্বাস্থ্য অনুসরণ করতে চাচ্ছে না। সরকার কিট পরীক্ষার প্রক্রিয়াও দ্রুততম করার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করতে চায়। কিন্তু সেজন্য গণস্বাস্থ্যের সহযোগিতা লাগবে। কিট উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণস্বাস্থ্যকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রতিটি পদক্ষেপে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। কিটের কিছু স্যাম্পল হস্তান্তর করে দিলেই হবে না।

গণস্বাস্থ্য বলছে সরকারকে তারা কিটের স্যাম্পল হস্তান্তর করতে চায়। ভালো কথা, কিন্তু সরকারের কোন ডিপার্টমেন্টকে স্যাম্পল দিতে চায় তারা? ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কি কিট পরীক্ষা না করে তা হস্তান্তর করার সক্ষমতা আছে? সরকারের যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গণস্বাস্থ্যের সংযোগ স্থাপন করার দরকার ছিল, সেটা কি তারা করেছে?

প্রথম ধাপে, উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণস্বাস্থ্যের আইন অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত একটি থার্ড পার্টি Contract Research Organization বা CRO-এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার কথা। বাংলাদেশে আইসিডিডিআর,বি-সহ মোট নয়টি এমন থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান (CRO) আছে। এই নয়টি CRO-এর মধ্যে কোনও একটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সেই কাজ কি করেছে তারা?

গণস্বাস্থ্য প্রেস কনফারেন্স না করে কোনও একটি CRO-এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে প্রটোকল তৈরি করার কাজ শুরু করে ফেললে কাজটা এগিয়ে যেতো। কিন্তু তারা সেই কাজটি না করে মিডিয়া ডেকে প্রেস কনফারেন্স করতে গেছে।
প্রশ্ন হলো, যে কিট ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি ধাপও পার করেনি, সেই কিট কীভাবে তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করতে গেলো?
অনেকে বলছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিমালা শিথিল করার কথা। নীতিমালা শিথিল করতে গেলে আমরা আরও বড় বিপদ ডেকে আনবো। উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়ে যাবে মানুষের। তবে, হ্যাঁ, নীতিমালা শিথিল না করে প্রক্রিয়া দ্রুততম করা যেতে পারে, কিন্তু সেজন্য তো গণস্বাস্থ্যের সহযোগিতা লাগবে, গণস্বাস্থ্যকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রক্রিয়ায় ঢুকতে হবে এবং প্রতি পদে পদে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। গণস্বাস্থ্য সেই প্রক্রিয়ায় না ঢুকে মিডিয়া ডেকে প্রেস কনফারেন্স করাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং প্রথম ধাপেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে কিট হস্তান্তর করতে গেছে, যা তাদের সর্বশেষ ধাপে করার কথা।

গণস্বাস্থ্য যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নয়, তা কিন্তু নয়। আমি আশা করবো, সঠিক প্রক্রিয়া মেনে যত দ্রুত সম্ভব গণস্বাস্থ্য থার্ড পার্টির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করে জাতিকে হয়তো একটি সত্যিকারের শুভ সংবাদ দিতে সক্ষম হবে। থার্ড পার্টির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

লেখক: অধ্যাপক। চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন

 

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ