X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক পরীক্ষা ও সৃজনশীল দুর্নীতি

আশফাক সফল
০৯ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৩:৫৪আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৪:৫৫

Ashfaq Shofol স্মৃতিশক্তির দিক থেকে কখনওই খুব বেশি শক্তসামর্থ্য ছিলাম না, আর তাই হয়তো মনে করা কঠিন হয়ে গেছে, কোনও পাবলিক পরীক্ষায় নকলের দায়ে বহিষ্কারের খবর ঠিক কবে পত্রিকায় শেষ দেখছিলাম। আমাদের সময় যখন আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, এমনকি তার কয়েক দশক পরেও পত্রিকায় এমন খবর দেখেছি। এটা মনে করতে খুব বেশি কষ্ট হয় না। আগে আমাদের কাছে পাবলিক পরীক্ষা বলতে ছিল মূলত—মেট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েট (অধুনাকালে যা এসএসসি আর এইচএসসি)। আর এখন আরও কিছু পরীক্ষা যুক্ত হয়েছে তালিকায়, যেমন জেএসসি, পিইসি। অনেকগুলো পাবলিক পরীক্ষা চালু হবার পরও, আচমকা কোথায় যেন হারিয়ে গেল এসব খবর। ভাবলাম দেশ বোধহয় নকলমুক্ত হয়ে গেছে। সাবাশ শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়। সাবাশ অভিভাবকবৃন্দ। সৎ, শিক্ষিত এবং পরিশ্রমী এক প্রজন্মের প্রত্যাশা নিয়ে করতে পারি আমরা স্বপ্নবিলাস।

নিজের মাথার ওপর খুব বেশি ভরসা না থাকলেও বেশ ভালই মনে আছে, আমাদের সময় পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার যদি ৫০%-এর বেশি হতো তাহলে সারাদেশের মিষ্টির কারিগরদের কয়েকবার মিষ্টি বানাতে হতো। আর এখন জিপিএ ফাইভ পাওয়া আর মুড়ি-মুড়কি খাওয়া মনে হয় একই কথা। ভাবতে ভালই লাগে শিক্ষার মানের উন্নয়ন হয়েছে । আমরা আর নই মূর্খ জাতি।

আজকাল স্কুলের ভর্তি পরীক্ষাতেও নাকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদেরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। বেশ ভালো কথা। বাচ্চারা স্কুলে কী শিখছে সেটা জানতে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীর বিকাশগত আলোচনা করতে অভিভাবকের সক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাবে। একই সঙ্গে শিক্ষকরা জানবেন অভিভাবকের চাওয়া সম্পর্কে এবং প্রয়োজনীয় সংযোজক রেখা টানা সম্ভব হবে আকাঙ্ক্ষা আর বাস্তবতার মাঝে। ধারণাগুলো বেশ সৃজনশীল।

সৃজনশীলতা, আজকাল নাকি পাঠ্যপুস্তকগুলো সৃজনশীল। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানবে ছোট-বড় স্বপ্নগুলো আকাবাঁকা অক্ষরে ফুটিয়ে তুলতে হবে নিজেদের পরীক্ষার খাতায়। পরীক্ষাকে আর মনে হবে না কোনও প্রতিযোগিতা, এগুলো হবে ভালোবাসা আর স্বপ্নের এক মিশ্রণ। পরীক্ষার খাতার প্রতিটি অক্ষরে গন্ধ পাওয়া যাবে শিক্ষকের স্নেহের আর শিক্ষার্থীর মননশীলতার।

বলা হলো অনেক স্বপ্নের কথা, ছড়ানো হলো স্বপ্নের ফুলঝুরি । কিন্তু আসলে কি তাই পাচ্ছি আমরা? স্বপ্নের মাঝে কি হানা দিচ্ছে কোনও দুঃস্বপ্ন ?

  • গাইড বই নামে একজাতের “পুস্তক” পাওয়া যায় বাজারে, যা পরে শিক্ষার্থীরা জানতে শিখে কী করে স্বপ্ন দেখতে হয়, ঠিক করে বললে গাইড বইয়ের লেখক কী স্বপ্ন দেখেছেন বা লিখেছেন। তার একটু কষ্ট করে মুখস্ত করে নিতে হবে লেখাগুলো। আগের দিনে যেখানে দশটা প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করতে হতো আজকের দিনে মুখস্ত করতে হয় পনের বা বিশটা। ভালোইতো, আর কিছু না হোক মুখস্ত করার দক্ষতা বাড়ছে আমাদের ।
  • অভিভাবকদের যেই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তাতে আর কিছু জানা না যাক বা না যাক, অন্তত জানা যাবে যে তিনি বা তারা কীভাবে সাহায্য করতে পারবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে, সেটা আর্থিকভাবে, সামাজিক দৃষ্টিকোণ বা রাজনৈতিক প্রভাবের দিক থেকে।
  • পাসের হার কমানো যাবে না কোনও মতেই। যদি কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে শিক্ষার মানের অবনমন হয়েছে অথবা কোন কারণে কোনও প্রশ্ন হয়েছে কঠিন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গণিত বা ইংরেজি প্রশ্ন খারাপ হয়।
  • আজকাল আর আগের মতো কষ্ট করে রাত জেগে নকল লিখে নিয়ে যেতে হয় না। খুদে-খুদে অক্ষরে লেখা নকল পড়তে গিয়ে চোখের ওপর চাপ ফেলতে হয় না । আর যাই হোক দেশ এখন ডিজিটাল। হলের বাইরে থেকে জানিয়ে দিবে মুঠোফোন বা অন্য কোনও মধ্যমে উত্তর, পরীক্ষার হলে আসার সময় কষ্ট করে বইয়ের পাতাগুলোর ছবি তুলে আনলেই হলো । হয়তো বা এসব নিয়ে পরীক্ষার হলে যাওয়া নিষিদ্ধ । তবে কত গ্যাজেট আছে ঘড়ির মতো দেখতে । সেগুলো নিলেই কেল্লা হতে। ‘কানে কম শুনি’ বলে যদি ব্লু-টুথ নিয়ে চলে যাই, কেউ তো আসবে না কান দেখতে।

গুণগতমান আর পরিমাণগত মানের তর্ক সবসময়ই ছিল, হয়তোবা থেকে যাবে । কিন্তু একথা মানতে হবে সৃজনশীলতার মাপকাঠি একমাত্র গুণগত পরিমাণ। আমার কাছে যা সৌন্দর্যের মানদণ্ডে অপূর্ব আপনার কাছে তা নাও হতে পারে শ্রেষ্ঠ, তবে একতরফা ভাবে ভালোলাগার কিছু সাধারণ গুণাবলি আছে আর পরিবেশনবাদী বিদ্যা (যেমন প্রবন্ধ, বিশ্লেষণ ইত্যাদিতে) ও পরিবেশন রীতির আছে কিছু সাধারণ ধারণা। আর গণিতের ক্ষেত্রে পরিবেশন তত্ত্ব যতোটা গুরুত্বপূর্ণ আরও বেশি প্রয়োজনীয় গাণিতিক তত্ত্বের প্রয়োগ । একই কথা সত্য বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে।

তথাকথিত প্রজ্ঞাবান মহল যখন বলেন, ‘প্রশ্ন  কঠিন হবার জন্য পাশের হার কমে গেছে’ তখন খটকা লেগে যায়, সৃজনশীল প্রশ্নকে কিভাবে কঠিন করা যায়? প্রশ্নের ধারা হবে ভিন্ন বা প্রচলিত ধারার বাইরে, তবেই না বুঝা যাবে সৃজনশীলতার ধারায় কতখানি এগিয়ে গেছি আমরা।

তবে বিস্ময়ের মাত্রা সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায় যখন দেখি কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার হলে দেওয়া হচ্ছে নকল । তারপরও থামতে পারে না দুঃসংবাদের বন্যাধারা। মিথ্যা গৌরবের আকাঙ্ক্ষায় বিভোর হয়ে অনেক অভিভাবক কিনে নিচ্ছেন প্রশ্ন। একবারও কী আমরা ভাবতে পারছি না আমরা দুর্নীতির হাতেখড়ি দিচ্ছি আমাদের সন্তাদের । জানিয়ে যাচ্ছি অর্থের বিনিময়ে নীতিরীতি সবই কেনা সম্ভব হয়। সৃজনশীল শিক্ষার্থী আমরা না পেলেও হয়তো বা পেয়ে যাবো সৃজনশীল দুর্নীতিগ্রস্ত এক প্রজন্ম।

লেখক : ব্লগার ও তথ্য-প্রযুক্তিবিদ

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ