X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

আসুন একটু ‘বাংলামি’ করি

ইকরাম কবীর
৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৪আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৯

ইকরাম কবীর সেদিন কিছু পত্রিকা ঘাঁটতে-ঘাঁটতে একটি শব্দ খুব ভালো লেগে গেলো। কে যেন ‘বাংলামি’ বলে একটি শব্দ ব্যবহার করেছে। অন্যরকম। সাধারণত ব্যবহার হয় না। অভিধানে আছে কিনা তাও জানি না। তবে শব্দটি পড়ে শীতের সকালে চাপা রোদের আলোয় নরম ঘাসের ওপর শিশির দেখার মতো আনন্দ পেলাম।
অনেকে শব্দটিকে ‘বাংলামো’ বলেন। ‘বাংলামি’ শব্দটি কয়েকবার বলতে শুনলেও এই প্রথম দেখলাম কাউকে লেখায় ব্যবহার করতে। মাথায় ভূত চাপলো। আমি কেমন করে এই শব্দটি ব্যবহার করতে পারি। ভাবলাম শব্দটি নিয়ে। কিছু ভাবনা মনে এলো। ফেসবুকে সবার কাছে জানতে চাইলাম শব্দটি শুনলে আমার বন্ধুদের মনে কী আসে। খুব একটা সাহায্য পেলাম না। কী কী করলে ‘বাংলামি’ করা হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে সবাই শুধুই আমাদের জাতিগত বদঅভ্যাসের কথাই বললেন। শব্দটি তাদের কাছে বোধহয় গালি মনে হয়েছে।
তবে একজন বললেন- ‘বেশি বেশি বাঙালিপনা’। আরেকজন বললেন- ‘গণমাধ্যমে বাংলাভাষা ব্যবহারের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে’। আমি ভাবছিলাম একেবারেই অন্য কথা। বেশি বেশি বাঙালিপনা অবশ্যই শুরু করা যায়, তবে তাতে আমার মন ভরবে না। শুধু বাংলা নিয়ে পাগলামি করলে কেমন হয়? আমি সেটাই ভাবছিলাম। তার সঙ্গে লেখালেখি এবং বই জুড়ে দিতে হবে। তাহলে দাঁড়ালো বাংলা বই এবং লেখালেখি নিয়ে কিছু পাগলামি করা। বইমেলা নিয়ে ‘বাংলামি’, লেখা নিয়ে ‘বাংলামি’, লাইব্রেরি নিয়ে ‘বাংলামি’ – এমন কিছু। অনেকে হয়তো বলবেন- এসব নিয়ে ‘বাংলামি’ করার কি আছে? বইমেলা এলে ফেব্রুয়ারিতে সবাই মেলায় যায়; লেখালেখি তো অজস্র মানুষ করে যাচ্ছেন – ভালো লেখা আর ক’জন লিখতে পারছেন? আর লাইব্রেরি তো সারা দেশেই আছে, গিয়ে বসে পড়া শুরু করলেই হয়! এ নিয়ে এতো মাতামাতির কী আছে!
বইমেলা নিয়ে লম্ফ দেওয়ার কি আছে বলছেন? অবশ্যই আছে; আশির দশকে এই বইমেলা নিয়ে যদি আমরা মাতামাতি না করতাম, তাহলে বইমেলা এতোদূর আসতো না। আমাদের বইমেলা থেকে অনেক দেশ এখন বই নিয়ে মেলা করতে চায়। এই বইমেলা নিয়ে ‘বাংলামি’ই আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার সম্মান এনে দিয়েছে। কিন্তু এই বইমেলাকে আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারছি না কেন? জানি, বলবেন যে এই মেলা সবগুলো জেলায় নিয়ে যেতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। নিশ্চয়ই তা প্রয়োজন। তাহলে? কোথা থেকে আসবে সে অর্থ?

একটু যদি খুলনা পাবলিক লাইব্রেরির দিকে তাকিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন শুধু অর্থ নয়, ইচ্ছারও প্রয়োজন রয়েছে। সে ইচ্ছা কি আমাদের আছে? সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় পাবলিক লাইব্রেরি আছে; সেখানে কিছু হলেও সরকারি অর্থ বরাদ্দ আছে। সেখান থেকে সামান্য অর্থ নিয়েই সবগুলো লাইব্রেরিতে স্বল্প পরিসরে বইমেলা শুরু করে যায়। আমার তো মনে হয় সম্ভব। একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক না! বই নিয়ে পাগলামি করতে পয়সা লাগে না। একবার ভাবুন না, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে একসাথে সবগুলো জেলায় বই নিয়ে মেলা হচ্ছে। সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখবে বাংলাদেশকে।  

প্রকাশকরা শুনছেন? আপনাদের দায়িত্ব এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি। একবার ভাবুন ঢাকার বইমেলা আপনাদের জন্য প্রচুর লেখক তৈরি করে। লেখক তৈরি হচ্ছে কিন্তু তা হচ্ছে শুধুই ঢাকাকে কেন্দ্র করে। আমরা কি ভাববো যে ঢাকার বাইরে কোনও বাঙালি লিখতে পারেন না? তা বোধ হয় না। ঢাকার বাইরেও অনেক মানুষের লেখার ক্ষমতা আছে। ঢাকার বাইরে বইমেলা হলে সেই লেখকদের খুঁজে পাওয়া যাবে। সেখানে প্রকাশনা সংস্থা গড়ে উঠবে। এ সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা একটু বাংলামি করি। 
আচ্ছা তা যদি না পারি তবে সারা দেশে স্কুলগুলোতে লাইব্রেরি তৈরি করবো তা নিয়ে ‘বাংলামি’ করতে পারি। অন্তত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে’তো করতেই পারি। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষরা অভিভাবকদের কাছ থেকে স্কুলে এটা-ওটা হবে বলে বিভিন্ন সময় অর্থ চেয়ে পাঠান। একবার’তো লাইব্রেরি উন্নত করবেন বলে সব ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে হয় দু’টো করে বই নাহলে তিন’শ করে টাকা চাইতে পারেন। যদি পাঁচ’শ ছাত্র-ছাত্রী দু’টো করে বই স্কুলে অনুদান দেয় তাহলে এক হাজার বই হয়ে যায়! লাইব্রেরি যদি না থাকে তাহলে লাইব্রেরি তৈরি হয়ে গেলো। থাকলে তা আরও সমৃদ্ধ হলো।

তারপর স্কুলে একটি ‘রিডিং টুর্নামেন্ট’ বা পড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যেতে পারে। এটাই হবে আমাদের ‘বাংলামি’।

শুধু পড়া কেন? লেখা নিয়েও ‘বাংলামি’ করা যায়। লেখা নিয়ে ‘বাংলামি’তে নেতৃত্ব দেবেন আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা।

তারা সব ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে চিঠি লেখাবেন – পত্রিকার সম্পাদকের কাছে চিঠি যেগুলো বিভিন্ন প্রত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে ছাপা হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা যেই এলাকায় বসবাস করে সেই এলাকার কোনও সমস্যা নিয়ে তারা পত্রিকায় চিঠি লিখবে।

চিঠিগুলো যখন ছাপা হবে তখন এই ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখে কতটা অনুপ্রেরণা পাবে তা একবার ভেবে দেখুন। এই বাংলামিটুকুতো সহজেই করা যায়। জানি না আপনারা ক’জন স্কুল শিক্ষক এই লেখাটি পড়ছেন।

‘বাংলামি’ শুধু বইমেলা, পড়া আর লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আরও অনেক কিছু নিয়ে ‘বাংলামি’ করে যায়। সেগুলো নিয়ে লেখার দায়িত্ব আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

বলুন না আর কী কী নিয়ে ‘বাংলামি’ করা যায়?

লেখক: কথাসাহিত্যিক

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ