দলের বিদেশ নীতি বিষয়ক ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি (বিদেশ বিষয়ক কমিটি) ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। গত ১৭ জানুয়ারি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কমিটির সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করা হয়।
বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
এদিকে কমিটির একাধিক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, গত ১৯ ডিসেম্বর ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির আহ্বায়ক ইনাম আহমেদ চৌধুরীর আওয়ামী লীগের যোগ দেওয়ার পরই কমিটি ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ রহমান আলোচনায় আছেন। তার সম্মতি থাকলে আগামী কমিটিতে তাকেই আহ্বায়ক হিসেবে চান বেশিরভাগ সদস্য।
বিএনপির এ বিলুপ্ত সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি নির্দেশক্রমে বিলুপ্ত করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহান্তে নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন কমিটি গঠনের পূর্বে যদি পুরনো কমিটির কোনও সদস্য কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে তাকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করছি।’
বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ড. আসাদুজ্জামান রিপন সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারি কমিটি পুনর্গঠনের জন্য ভেঙে দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে কমিটির পুনর্বিন্যাস জরুরি হয়ে পড়েছিল। তাই পুনর্গঠন হবে।’
ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি চিঠি ইস্যু করে কমিটির সদস্যদের জানানো হয়। এর কয়েক মাস আগে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নতুন করে কমিটি পুনর্গঠনের অনুরোধ করেন। পরে তারেক রহমান কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন।
বৈদেশিক সম্পর্কিত কমিটির দুই সদস্য জানান, গত কয়েক বছরে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্যরা বয়স, সময় ও সক্ষমতার কারণে সময় দিতে পারছিলেন না। শমসের মবিন চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগের পর কমিটির হাল ধরেন সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান। ২০১৫ সালে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর কমিটিতে কাজ বন্ধ করে দেন। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ রহমানকে চেয়ারম্যান করতে চাইলে ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে এ পদে নিয়োগের প্রস্তাব করেন রিয়াজ রহমান।
জানা গেছে, ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির আহ্বায়ক ইনাম আহমেদ চৌধুরীর পদত্যাগের কারণে প্রধানত কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর ইনাম আহমেদ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপরই দলের নীতি ও বৈদেশিক কাজে নতুন অগ্রগতি আনতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইনাম আহমেদ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিলুপ্ত কমিটির তরুণ দুই সদস্য জানান, গত কয়েক বছর ধরে অনেকটাই জোড়াতালি দিয়ে চলছিল বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। বিশেষ করে কমিটির সিনিয়র সদস্যদের অনেকেই অসুস্থতার কারণে ধারাবাহিকভাবে মিটিংয়ে আসতে পারেননি। অনেকে অংশ নিলেও বাড়তি চাপ নিতে অপারগ ছিলেন। এছাড়া এমন সদস্যও ছিলেন, যাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কৌশল সম্পর্কে অজানা ছিলেন। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে ব্যর্থ হয় ফরেন কমিটি।
এদিকে, কমিটির নতুন আহ্বায়ক হিসেবে রিয়াজ রহমান বেশিরভাগ সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপিত হলেও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য আহ্বায়ক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির কোনও কোনও নেতার কাছে। এই সদস্যকে আহ্বায়ক করা হলে অনেক সদস্য ফরেন অ্যাফেয়ার্সের কাজ থেকে বিরত থাকবেন, এমন তথ্যও এসেছে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে।
বিলুপ্ত কমিটির জ্যেষ্ঠ এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রাজনীতিকদের মধ্য থেকে কাউকে প্রধান করা হলে বাকিদের মধ্যে চাপ পড়ে। একইসঙ্গে কমিটিতে থাকা সার্বক্ষণিক রাজনীতিকরাও অনীহা দেখান। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য যারা একইসঙ্গে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য, তাদের মধ্যে বেশি বিভাজন রয়েছে।’
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন কমিটির আকার ছোট হবে এবং কার্যকর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকজন সদস্যের কথা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে ঠিক জানি না।’