ঢাকা শহরের ৩০৬ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে কয়েক হাজার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিংমল, খাবারের দোকান থাকলেও নেই তেমন শিশুদের খেলার মাঠ ও পড়ার জায়গা। শিশুদের জন্য এই শহরে নেই তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও গ্রন্থাগারও। সেই অভাব পূরণে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি। শিশুদের জন্য প্রস্তুত অত্যাধুনিক ‘শেখ রাসেল শিশু গ্রন্থাগার’,যেখানে শিশুরা নিজের মনের মতো পড়তে, জানতে ও শিখতে পারে।
গ্রন্থাগারটি শিশু অ্যাকাডেমির দ্বিতীয় তলায়। ঢুকতেই চোখে পড়বে সাদা রঙের সারিবদ্ধ টেবিল। টেবিলের চারপাশ ঘিরে আছে ছোটদের চেয়ারে। চেয়ারের পাশে রয়েছে ২৫/৩০টির মতো বইয়ের তাক। তাকগুলোতে সাজানো আছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই। বাংলা ও ইংরেজি দুটি ভার্সনের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা বিভাগও।
‘সেই বই’ নামে গ্রন্থাগারে রয়েছে কর্নার, যেখানে অনলাইনে বই পড়ার সুযোগ আছে শিশুদের। পুরো গ্রন্থাগারে যেসব বই আছে তার সবগুলোর কপি রয়েছে সেই অনলাইন ভার্সনে। অনলাইনে পড়ার জন্য একটি ট্যাব দেওয়া হয়েছে সেই কর্নারে। এছাড়া, রয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কর্নার।
শিশুদের মাঝে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচিতি তুলে ধরতে এবং তাঁর গুরুত্ব বোঝাতে রয়েছে আলাদা একটি কর্নার— নাম ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা সব ধরনের বই স্থান পেয়েছে এ কর্নারে। শুধু তাই নয়, দেয়ালে টানানো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু পুরনো ছবিও।
অডিও ভিজ্যুয়াল নামে রয়েছে একটি আলাদা সেমিনার কক্ষ, এখানে রয়েছে আধুনিক সব মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিশুদের সরাসরি চিত্ত বিনোদনের জন্য এই কক্ষে মুভি দেখানো,গল্প বলা,কবিতা পাঠের আসর বসানো হয়। শিশুদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এছাড়াও চলে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা।
এ গ্রন্থাগারে বর্তমানে মোট বই রয়েছে ৩৭ হাজার ৪৮৬টি। আর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫ হাজার ১২৬ জন। একসঙ্গে ২০০ শিশুর বসার ব্যবস্থা আছে এখানে। এই গ্রন্থাগারের সদস্য হতে হলে ১০০ টাকা জামানত দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। সদস্যরা গ্রন্থাগার থেকে একটি বই ১৫ দিনের জন্য বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। গ্রন্থাগারটি সপ্তাহে সাত দিনই সকাল ১০টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার সময়ই এ গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়। তবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছিল পুরনো আঙ্গিকে। পরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আধুনিকায়নের কাজ শুরু করে শিশু অ্যাকাডেমি। এ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। তখন থেকেই শিশুদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই গ্রন্থাগার।
শিশুদের জন্য এমন আধুনিক একটি গ্রন্থাগার রাজধানীতে রয়েছে, কিন্তু রাজধানীবাসীর কাছে সুপরিচিত নয় কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে শিশু অ্যাকাডেমির গ্রন্থাগার বিভাগের প্রধান রেজিনা আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুরা একা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের কারও না কারও ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। আর আমাদের লাইব্রেরিটা এমন জায়গায়, যেখানে অভিভাবকদের অনেক দূর থেকে সন্তানকে নিয়ে আসতে হয়। ফলে অনেকে ঢাকার অন্যপ্রান্ত থেকে শিশুকে নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত হন। সুপরিচিত করতে আমরা বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছি’।
তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘তারপরও সপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতে প্রচুর ভিড় হয়। তখন শিশুর সঙ্গে অভিভাবককে লাইব্রেরির ভেতরে অ্যালাউ করা সম্ভব হয় না।’
রেজিনা আখতার বলেন, ‘সব থেকে ভালো হয় যদি স্কুলগুলো আমাদের সহায়তা করে। একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক যদি সময় করে শিশুদের নিয়ে আসেন, তবে অনেকটা শিক্ষা সফরের মতো হয়ে যাবে। শিশুরাও আনন্দ পাবে। আমাদের এখানে একটা জাদুঘরও আছে। যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসে, তবে শিশু অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে তাদের যাতায়াত ভাড়াটাও আমরা বহন করে থাকি।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিমাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা একটি করে বইয়ের ওপর পাঠচক্র করা হবে,জানালেন রেজিনা আখতার।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
/