শৈত্যপ্রবাহে ঠান্ডা এড়াতে আপনার শিশুকে বেশ গরম পোশাক পরিয়ে রাখলেন। দেখা গেলো, সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুটি ঘরময় হেঁটে-দৌড়ে বেড়ানোর কারণে পোশাকের ভেতরে ঘামে ভিজে গেছে, যা আপনি খেয়ালই করেননি। একঘণ্টার ভেতরে নাক দিয়ে ঝরতে থাকলো সর্দি। কিংবা রাতে ভালো করে পোশাক পরিয়ে কম্বল বা লেপের নিচে শোয়ানোর কারণে শিশুটির স্বস্তি হচ্ছে কিনা, দেখলেন না। ফলে শিশুটি উসখুস করলো, কিন্তু সে ঘুমালো না। একমাস আগেও রাতে একবার ডায়াপার বদলাতে হতো, হয়তো এখন সেটি করছেন না। ফলে ভেজা ডায়াপারে থাকায় শিশুটি অস্বস্তির পাশাপাশি র্যাশ ও ঠান্ডায় একাকার। চিকিৎসকরা বলছেন, খুব ছোট ছোট অসতর্কতা থেকেই শিশুরা বাঁধিয়ে ফেলতে পারে বড় কোনও অসুখ। একটু সাবধান থাকলে অসুখ যেমন এড়ানো যাবে, তেমনই শিশুরা ভালো থাকবে।
এসবের বাইরে শিশুদের ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এ রোগগুলো সংক্রামিত হয়, তাই যতটা সম্ভব শিশুদের বাইরে কম নেওয়াই ভালো।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণ কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর-বি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৫২ জন, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ৮৭২ জন এবং সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ৭৫৭ জন। সংস্থাটি বলছে— ভর্তি রোগীর মধ্যে ৬০-৬৫ শতাংশই শিশু।
শীতে নবজাতকের যত্ন
শীতকালে নবজাতকের জন্য বাড়তি যত্ন দরকার। শীতে সতর্ক না থাকলে আজীবনের জন্য শ্বাসকষ্ট বেঁধে যেতে পারে। হতে পারে নিউমোনিয়াও।
এবিষয়ে ডা. রকিবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, নবজাতককে সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হয়। এটি ভুল ধারণা। শিশুরা মায়ের দুধ পান করে বলে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। তাই খুব গরম কাপড় না দিয়ে হালকা সুতির কাপড় পরাবেন।’ তিনি বলেন, ‘শিশু কথা বলতে পারে না। ফলে সে অস্বস্তি দেখালে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রয়োজনটা বুঝতে হবে। অনেক সময় চার পাশ লাগানো থাকায় ঘরে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।’
রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘নবজাতককে ডায়াপার পরালে সেটা যত ঘন ঘন পরিবর্তন করা যায়, ততই ভাল। দীর্ঘক্ষণ শিশুর গায়ে তার মলমূত্র কোনও কারণে লেগে থাকলে চর্মরোগ হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টি র্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ডায়াপার পরিবর্তনের সময় শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে মুছিয়ে নেওয়া যেতে পারে।’
ঠান্ডা লেগে নাজেহাল?
শিশুর ঠান্ডা লাগলে সে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। নিশ্বাস নিতে পারে না বলে ফিডার বা বুকের দুধ টানতে সমস্যা হয়। অস্বস্তি দূর করতে দিনে দুই থেকে তিন বার নজল ড্রপ ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলে জানান ডা. রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চার পাশের ধুলা, বাতাসে নানা ধরনের বিষ মিলিয়ে সারাবছরই ঠান্ডার সমস্যায় ভুগতে হয় শিশুকে। শীতকালে ঠান্ডাটা বাড়তি যোগ হয় বলে বাড়তি সতর্কতা দরকার।’
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তীব্র শীতের সময় শিশু ও বৃদ্ধের জন্য বাড়তি সতর্কতা দরকার। এসময় শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো বেড়ে যায়। নিউমোনিয়ার মতো জীবনঘাতী অসুখ হওয়ার শঙ্কা দেখা যায়। ফলে এই বয়সীদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। গরম জামা-কাপড়ের পাশাপাশি গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার ও ঘেমে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় কান মাথা ঢেকে রাখতে হবে।’ ফ্রিজের ঠান্ডা খাবারে সতর্কতা দরকার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কেননা, ঠান্ডাতে আক্রান্ত হলে অনেকগুলো জটিলতা হতে পারে। ঘরের জানালা এমনভাবে খোলা রাখতে হবে, যাতে বায়ু প্রবাহ যথাযথ থাকে এবং একইসঙ্গে ঠান্ডা না লাগে।’