ভারতীয় নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার। দেশটির ‘ইউনিক আইডেনটিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র (ইউআইডিএআই) প্রবর্তিত আধার কার্ডের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের টাইগার আইটির বায়োমেট্রিক সফটওয়্যার (এসডিকে) ব্যবহার করা হচ্ছে। টাইগার আইটির এই এসডিকে সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য ভারতের উচ্চ আদালতেরও সম্মতি পাওয়া গেছে। টাইগার আইটির এই সফটওয়্যার সম্পর্কিত হার্ডওয়্যারটি তৈরি করেছে জাপানভিত্তিক হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান রেনেঁসাস সেমিকন্ডাকটর। টাইগার আইটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইগার আইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার তাদের সফটওয়্যারের নিরাপত্তার বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়েই এটা গ্রহণ করেছে। তারা দাবি করেছে, এই এসডিকে সফটওয়্যার শক্তিশালী নিরাপত্তাবেষ্টিত। তাদের প্রযুক্তির রক্ষণব্যূহ ভাঙা কোনও হ্যাকারের পক্ষেই সম্ভব নয়।
এর আগে ভারত সরকারের আধার প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়ার বিষয়টি হ্যাক হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ফলে তাতে আপত্তি তুলেছিল দেশটির আদালত।
টাইগার আইটির প্রযুক্তিবিদ মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিভাইসটি এনআইএসটি সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত বায়োমেট্রিক এসডিকে এবং অ্যাসিমেট্রিক এনক্রিপশন দ্বারা সুরক্ষিত। এর নিরাপত্তা ভেদ করা হ্যাকারদের পক্ষে অসম্ভব। এটির ব্যাবহারে অথেনটিকেশন প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রতারকরা কোনও বায়োমেট্রিক ডাটা অ্যাক্সেস করতে পারবে না।
টাইগার আইটি আশা করছে, ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তির তথ্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে এই তাদের সফটওয়্যার রফতানির সুযোগ রয়েছে।
ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বলদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেওয়া ভর্তুকি যাতে প্রকৃত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে তার জন্যই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এই আধার কার্ডের প্রচলন করে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য আধার কার্ডে ১২টি সংখ্যার একটি নম্বর রয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যক্তির ছবিসহ অন্যান্য তথ্য এবং বায়োমেট্রিক ছাপও রয়েছে এতে। একটি পর্যায়ে এই কার্ড দেশের নাগরিকের পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই দেশটির পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ইউনিক আইডেনটিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র (ইউআইডিএআই) এর মাধ্যমে এই কার্ড প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু, শুরু থেকে নানা বিতর্ক দেখা দেয়। প্রশ্ন দেখা দেয় ব্যক্তির প্রদত্ত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত এটি দেশটির উচ্চ আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। এই সফটওয়্যার ও ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির রয়েছে বাংলাদেশের ভোটার তথ্য সংরক্ষণে ই–সেবা ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিশাল অভিজ্ঞতা। তাদের তৈরি সফটওয়্যার দিয়ে রোহিঙ্গাদের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুমানিক দেড় হাজার প্রকল্পে টাইগার আইটির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের ড্রাগ লাইসেন্স প্রজেক্টেও টাইগার আইটির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্ট কার্ড ছাপানো প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এ বছর এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক টাইগার আইটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। অবশ্য টাইগার আইটি বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাও করেছে। শিগগিরই ওই মামলার শুনানির কথা রয়েছে বলে টাইগার আইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।