X
সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪
১৭ আষাঢ় ১৪৩১

ফুটপাতের হলুদ টাইলসের ‍সুফল পাচ্ছেন না দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা

তাসকিনা ইয়াসমিন
০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:৩৬আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:৪৪




দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চলাচলের সুবিধার জন্য ফুটপাতে বসানো হয়েছে হলুদ টাইলস ‘আমার অফিস আদাবরে। সেখানকার ফুটপাতে আমাদের মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাদাছড়ির ব্যবহার উপযোগী নির্দিষ্ট টাইলস বসানো হয়েছে। কিন্তু এই টাইলস ধরে আমি হাঁটতে পারি না। কারণ কিছুদূর যাবার পরেই কোনও না কোনও বাধার মুখে পড়ি। যা আমাদের মতো মানুষের কাছে ফুটপাত ব্যবহারকে অনিরাপদ করে তুলেছে।’

বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এভাবেই ফুটপাতে চলাচলে নিজের অসুবিধার কথা জানিয়েছেন উইমেন উইথ ডিজ্যাবিলিটি ফর বাংলাদেশ (ডাব্লিউডিডিএফ)’র চেয়ারম্যান শিরিন আখতার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিরিন দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সড়কে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চলাচল সহজ করতে বিশেষ ধরনের হলুদ টাইলস ব্যবহার করা হয়। ফুটপাতে চলাচল করার সময় এই বিশেষ টাইলস অনেকেরই নজরে আসে।’

তবে যাদের জন্য এই টাইলসের ব্যবহার তারাই এর সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শিরিন বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য টাইলসগুলো সঠিক স্থানে দেওয়া হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে ফুটপাতে টাইলস দেওয়া হলেও গাছ সরানো হচ্ছে না। এর ফলে টাইলস ধরে এগোতে গেলে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেতে হয়। আবার অনেক সময় লাইটপোস্ট সরানো হচ্ছে না, টেলিফোনের বক্স সরছে না। ফুটপাত থেকে হকার উঠছে না। এতে করে আমাদের কোনও লাভ হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘সড়কের পাশের ফুটপাত ধরে নিরাপদে চলাচলের কথা বলা হলেও তা এখনও অনিরাপদ। আবার অনেক স্থানে সড়কের পাশে ফুটপাতই থাকে না। আবার রাস্তায় কিছুক্ষণ ফুটপাত থাকার পর কোনও বাড়ি বা ভবনের গেটের সামনে সেটা নিচু হয়ে যায়। এতে করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ অন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলে সমস্যা হয়।’

সড়কের পাশে হাঁটার জন্য ফুটপাত ঠিকমতো থাকছে না উল্লেখ করে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজ্যাবিলিটির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফুটপাত তো ফুটপাত থাকছে না। ঢাকার শহরের বেশিরভাগ যায়গায় কোনও ফুটপাত নেই। এখন তো ফুটপাতেই নানা মার্কেট বসে। তাই ফুটপাতে বিশেষ টাইলসের ব্যবহার করে লোক দেখানোর কোনও মানে নেই। এই কথাটা আমরা বারবার বলে আসছি। ফুটপাতে বিশেষ টাইলসের ব্যবহার দরকার, তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে কোনও অর্থ থাকে না, কোনও লাভ নেই।’

ভুক্তভোগী শিরিন আখতার আরও বলেন, ‘আমরা নিরপদ ফুটপাত ও বিশেষ টাইলসের ব্যবহার নিয়ে বহু আলোচনা-সভা, সেমিনারে বলেছি। এটা উনারা (কর্তৃপক্ষ) করছে, কিন্তু ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা বলেছি টাইলসগুলো যে বসানো হচ্ছে সেগুলো যেন ঠিকভাবে ধরে এগোনো যায়। টাইলসগুলো যেন সঠিকভাবে একটা নির্দেশনা দেয়। ফুটপাত থেকে টেলিফোনের লাইন, পোস্টার, এগুলো যেন সরিয়ে ফেলা হয়। যাতে টাইলসটা ধরে নিরাপদে যাওয়া যায়।’

এসব প্রতিবন্ধকতা কঠিন করে তুলেছে প্রতিবন্ধীদের ফুটপাত ব্যবহার ফুটপাতের মাথায় বেপরোয়া মোটরবাইক থামাতে খুঁটি বসিয়ে দেওয়ার বিষয়টির সমালোচনা করেছেন শিরিন। তিনি বলেন, ‘ফুটপাতের মাথায় তো খুঁটি বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা করার ফলে হুইল চেয়ারও যেতে পারছে না। অনেক ফুটপাতই এত বেশি উঁচু যে তাতে উঠাটাও খুবই বিপজ্জনক। উঁচু ফুটপাতে একটা মেয়ের জন্য না দেখে উঠা অনেক কঠিন। রাস্তা তার মাঝখানে ড্রেন। এরপর উঁচু ফুটপাত। এই ফুটপাতে কতটা নিরাপদে উঠা সম্ভব? সাদাছড়ি দিয়ে কি এই ফুটপাতে উঠা সম্ভব? এত উঁচুতে তো সাদাছড়ি টাচ করার কোনও নিয়ম নেই।’

ফুটপাতের বেহাল অবস্থা নিয়ে জহুরুল আলম বলেন, ‘আমরা বলেছি, ওরা (প্রশাসন) করছে। কিন্তু ফুটপাত আছে, এ বিষয়টিইতো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফুটপাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা হাঁটবে শুধু তা নয়, এই ফুটপাততো প্রতিবন্ধীরাও ব্যবহার করবে। তারা কি কেউ এটা ব্যবহার করতে পারবে? প্রধানমন্ত্রী যতই বলুন তার উদ্যোগ আছে, তার পক্ষে তো এগুলো দেখা সম্ভব নয়। এগুলো সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে, তাদের যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলোতে হুইল চেয়ারপারসন ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে হাঁটতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ফুটপাতের হলুদ টাইলস কতটুকু কাজে লাগবে তা দেখে আমি হাসি। এগুলো করে কি হবে? এক্সেসেবল সিটির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা আসলে তেমন সিটি না। আপনি দেখবেন ফার্মগেটের পর কতগুলো রাস্তা কাটা। ওই রাস্তা দিয়ে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা হুইল চেয়ারপারসন কীভাবে যাবে। ওখানে সবসময় চলমান গাড়ি থাকে। কীভাবে একজন রাস্তা পার হবে।’

তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফুটপাতকে ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন শিরিন। তিনি বলেন, ‘আরও চিন্তা-ভাবনা করে নিখুঁত করে বিষয়টির বাস্তবায়ন দরকার। আমরা বারবার বলছি, সবপক্ষ থেকে বলছে, আরও ভালো হবে। এই ভালোটাই আমরা দেখতে চাই।’

জহুরুল আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টিকে একেবারে রিজেক্ট করছি না। তবে, যারা বাস্তবায়ন করছে তারা যেন ঠিকভাবে করে, তা চাই। প্ল্যানটা ছিল তারা অন্তত শহরের একটা রাস্তা চলাচলের উপযোগী করবে কিন্তু সেটা হচ্ছে না।’

সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব দ্য ইনটেলেকচ্যুয়াল ডিজ্যাবিলিটির (সুইড বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য ভালো। এ উদ্যোগ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিরাপদ পথচলার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করতে পারি। কিন্তু এটা কার্যকরি হচ্ছে না। কেউ তো এর উপকারভোগী হচ্ছে না। তবে তৈরি হচ্ছে।’

এক্ষত্রে ফুটপাত ব্যবহারে প্রতিবন্ধীদের সচেতন করা এবং ফুটপাতের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে বিশেষ টাইলস বসানোর ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ঢাবি হবে উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান’
‘ঢাবি হবে উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান’
ইংল্যান্ডকে প্রেরণা জুগিয়েছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ভিডিও 
ইংল্যান্ডকে প্রেরণা জুগিয়েছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ভিডিও 
শিশুদের জন্য সংগীতের নতুন রিয়েলিটি শো
শিশুদের জন্য সংগীতের নতুন রিয়েলিটি শো
সারা বছর নিষ্ক্রিয়, বর্ষা এলে টনক নড়ে প্রশাসনের
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসসারা বছর নিষ্ক্রিয়, বর্ষা এলে টনক নড়ে প্রশাসনের
সর্বাধিক পঠিত
নরসিংদীতে সাপের কামড়ে ১৪ জন হাসপাতালে
নরসিংদীতে সাপের কামড়ে ১৪ জন হাসপাতালে
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
এই বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে কোথায় যাবেন?
এই বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে কোথায় যাবেন?
৪ ফ্ল্যাটের চাবি বেনজীরের কাছে, প্রবেশ করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
৪ ফ্ল্যাটের চাবি বেনজীরের কাছে, প্রবেশ করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পরিস্থিতি দেখে’ সিদ্ধান্ত নেবেন শিক্ষামন্ত্রী
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পরিস্থিতি দেখে’ সিদ্ধান্ত নেবেন শিক্ষামন্ত্রী