নিজ নিজ কলেজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজধানীর উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা চলছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা মূলত এই আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয়। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও উসকানিকে। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে অন্য পক্ষের উসকানি রয়েছে। আবেগ সামলাতে না পেরে সহিংসতা ও নাশকতায় জাড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২০ ও ২১ নভেম্বর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ সংঘর্ষে জড়ায়। এরপর ২৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রবিবার (২৪ নভেম্বর) ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অবরোধ করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিন একদল শিক্ষার্থী পুরান ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এই হামলায় রাজধানীর ১৫টিরও বেশি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন বলে অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়েছে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে মামলা ও ভাঙচুর করে। এই হামলায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল সর্বদা একাত্মতা পোষণ করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তা কখনোই ছাত্রদল মেনে নেবে না।’
অন্যদিকে, রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থীর আহতের খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজ সংঘর্ষ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সঙ্গে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর সংঘর্ষে দুই কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আবার আক্রমণ করতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে পদে বসে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখেনি সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর জের ধরেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টিতে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরাই আহত হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের দেড়শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
অভিজিতের মৃত্যু ও ন্যাশনাল মেডিক্যালে হামলা
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রবিবার (২৪ নভেম্বর) ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফটক অবরোধ ও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে হামলা
রবিবার (২৪ নভেম্বর) ন্যাশনাল মেডিক্যালে হামলার পর পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। সেসময় দুই কলেজেই স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিল। এসময় দুই কলেজের শতাধিক পরীক্ষার্থী ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। সোহরাওয়ার্দী কলেজের মূল ফটকসহ ক্যাম্পাসে থাকা কলেজের মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কারসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের ডিজিটাল নোটিশ বোর্ডটিও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের নিচতলা থেকে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও অফিসরুমে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা।
একই ভবনে অবস্থিত ইসলামিক স্টাডিজ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেও ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। বাদ যায়নি পরীক্ষার হলে থাকা বেঞ্চ ও উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ও। তৃতীয় তলায় অবস্থিত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়, এসময় গবেষণাগারে থাকা কঙ্কালটিকেও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী অবস্থা বেগতিক দেখে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের সব কক্ষে ভাঙচুর করেছে। কলেজে শিক্ষকদের গাড়িও ভাঙচুর হয়েছে। পুরো কলেজ এখন ধ্বংসস্তূপ। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখে বলতে পারবো। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বারবার সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু তারা শুধু বলেছে, তারা ন্যাশনাল মেডিক্যালে আছেন। কয়েকজন পুলিশ এসেছিল, কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ছিল। আমরা বারবার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছি কিন্তু সেটা পাইনি।
অন্যদিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেদিন তাদের আন্দোলন দমন করতে কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে করে তাদের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন জানান, ‘আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল করেছি। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা না করে উল্টো মারধর করেছে। তাদের সঙ্গে এই দুই কলেজের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও যোগ দেয়।’
এ বিষয়ে কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার নয়, বাইরের কোনও উসকানি রয়েছে। উসকানিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা আবেগে জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে।সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা
সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে হামলার ‘প্রতিশোধ’ নিতে পরদিন সোমবার (২৫ নভেম্বর) ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। এদিন সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন দাবি করেছেন, রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় তাদের প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে আমরা ভাবিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সব ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কুচক্রী মহল কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে।
বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক্যালে সংঘর্ষ
এদিকে একইদিন (রবিবার) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরদিনও সোমবার (২৫ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠান দুটোর হলগুলোতে ছিল থমথমে পরিস্থিতি।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা যায়, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক দফায় সংঘর্ষের পর মাঝরাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক টিম।
সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে হামলা, বন্ধ ঘোষণা
অন্যান্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার জের ধরে হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয় রাজধানীর সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। সহিংসতার শিকার হওয়ার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ২০২৫ সালের নার্সারি ও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির লটারিও স্থগিত করা হয়। সোমবার (২৫ নভেম্বর) কলেজের পৃথক দুই বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে রবিবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে পুরান ঢাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলার প্রতিবাদে সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে কলেজের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের কক্ষ ভাঙচুরসহ ক্যান্টিনেও হামলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মর্নিং শিফট, ডে শিফট ও কলেজ শাখার সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সবকিছু অনুকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম যথারীতি শুরু হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বান
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেনে, অনেকবার বলা হয়েছে শ্রমিকরা-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। শুধু শিক্ষার্থীরা না, বহু সংগঠন ঢাকা শহরে আন্দোলন করছে। তারা সড়ক আটকাচ্ছে। এগুলোর সমাধান কী করে হবে, আমি তো একা সমাধান করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের আহ্বান করছি—তোমাদের ন্যায্য দাবি আমার কাছে নিয়ে এসো, সেগুলো পূরণ করা হবে। অনেক দাবি ইতোমধ্যে থেমে গেছে। কারণ আমরা বলেছি, এগুলো ন্যায্য দাবি, আমরা সমাধান করবো। কিছু কিছু দাবি আছে, যেগুলো ন্যায্য না, সেগুলো আমরা মানবো না। ন্যায্য দাবি না হলেও রেললাইন অবরোধ করা হচ্ছে, যাত্রীদের আক্রমণ করা হচ্ছে—এগুলো করলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে যাবে। সেদিক থেকে আমরা সুবিধায় আছি। যারা অন্যায্য দাবি নিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়, তাদের প্রতিরোধ করবে, এমনও বলাবলি হচ্ছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রতিক্রিয়া
রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরও রক্তপাত হতো বলে মনে করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘অকারণে যে কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে।
সোমবার(২৫ নভেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, যদি কেউ অযৌক্তিক কারণে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, সে যে পরিচয়েরই হোক না কেন; দেশের স্বার্থে তাদের প্রতিহত করে জনমানুষের নিরাপত্তা প্রদান করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান কাজ৷
উসকানি দেখছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনাকে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার ফেসবুক পোস্টে। তিনি লিখেছেন, বাম এবং ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি গণঅভ্যুত্থানে, এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে না পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে। ছাত্রদের আজ সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের বৈধতার সংকট তৈরি হলে, যারা লাভবান হবে, তারা সবাই এই উসকানি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার সাথে জড়িত। ধীরে ধীরে আমরা সবই বলবো। অথবা, আপনারা চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।
নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে মাহফুজ আলম তার পোস্টে লিখেন, অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়। আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে এগোনোর। কিন্তু, হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
‘পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা’ দেখছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। বড় কোনও পরিকল্পনা না থাকলে একদিনে এতগুলো ঘটনা এটা তো কাকতালীয় নয়। আমরা মনে করছি, এখানে নানান পক্ষের পরিকল্পনা আছে। সরকার সফলভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করুক— এটা অনেকে হয়তো চাচ্ছে না। আমাদের যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, তারা তো নানানভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, পুলিশে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। প্রশাসনের স্থবিরতা কাটানোর জন্য প্রশাসনেও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছি। এই বিষয়গুলো নস্যাৎ করতে আমাদের অনেক বেশি এসব ঘটনায় ব্যস্ত রাখার জন্য, সারা দেশের দৃষ্টি এদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা এটা তদন্ত করছি। দেশে বা দেশের বাইরে ইন্ধনে কারা জড়িত।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
‘ছাত্রবেশে সন্ত্রাসী’ দেখছে পুলিশ
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনাকে আমরা দুর্ঘটনা বলবো না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে।’