বাম্পার ফলনের পর ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না খুলনার দাকোপ উপজেলার আমনচাষীরা। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে দাকোপের ৩১ হাজার আমনচাষী পরিবারে। উপজেলা কৃষক কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, স্থানীয় লবনাক্ত বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে আমন ধানের ফলন বেশি হয় বলে দাকোপসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিংহভাগ উপকূলীয় এলাকায় এ ধানের চাষই অধিক কৃষকপ্রিয়। এ বছর ১৯০৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে যা থেকে ধান পাওয়া গেছে ৭৬২০০ মেট্রিক টন। ধান বিক্রয়ে উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না কৃষকের।
দাকোপের কৃষক রণজিৎ মন্ডল বলেন, তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে আমন চাষ করে ৭৫ মন ধান পেয়েছেন। বিঘা প্রতি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা করে প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারমূল্যে এই ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৮ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, বিঘাপ্রতি আমন চাষে ৮০০ টাকা, বীজ বাবদ ৩৫০ টাকা, কৃষাণে ১৩০০ টাকা, পোকা দমনে ৪৮০ টাকা, টিএসপি সারে ২১০ টাকা, ইউরিয়া সারে ১৮০ টাকা, পটাশে ১০ টাকা, কাটার সময় ১০৪০ টাকা, পরিবহনে ৪৫০ টাকা খরচ হয়।
দাকোপের কৃষক জগদীশ মন্ডল বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় ধানের হাট বাজুয়া ও চালনা হাটে ইরি-২৩ মনপ্রতি ৫৩০ টাকা থেকে ৫৪০ টাকা, ইরি-১০ মনপ্রতি ৫৬০ টাকা থেকে ৫৭০ টাকা এবং দেশী মোটা ধান ৫৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালনার কৃষক সমীর মৃধা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার পর ৫ বছর এলাকায় ধানের ফসল ভাল হয়নি। এতে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের কোনও লাভ হয়নি। ধানের অস্বাভাবিক দরপতন ঘটায় এবারও একই সংকটে তাদের পড়তে হবে।
নলিয়ানের কৃষক জব্বর আলী লস্কর বলেন, দেশের সর্বত্র ধানের যে মূল্য থাকে তার চেয়ে বাজুয়ার হাটের দাম সবসময় অনেক কম থাকে। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী মিল মালিকদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ অঞ্চলের কৃষকদের ঠকিয়ে চলেছে।
খুলনা জেলা কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি ও ওয়ার্কাস পার্টির নেতা গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান লাগাতে কৃষকের ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ধানের বাজার দর এত কম হলে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেকের ঋণ-দেনা পরিশোধ হবে না।
কৃষক বিদেশ রায় বলেন, সরকার ধানের মূল্য ঘোষণা না করায় মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে ধানের প্রকৃত মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দাকোপ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম বলেন, আমন মৌসুমে সরকার ধান ক্রয় না করার কারণে তাদের পক্ষ থেকে ধানের মূল্য ঘোষণা করা হয়নি।
/এইচকে/