X
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ম্যানহাটনে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ও লজ্জা (অডিও)

হারুন উর রশীদ
১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৪:৪৬আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৪৮

  বিস্ফোরণের পর ম্যানহাটনের ঘটনাস্থল

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটনের একটি বাস টার্মিনালে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহ নামে এক বাংলাদেশির সম্পৃক্ততায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। এ ঘটনার কারণে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে।  একই সঙ্গে লজ্জায় পড়েছেন তারা।  সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ।

এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে ‘ব্রুকলিনের একটি বাড়িকে পুলিশ ঘিরে ফেলার পর’ সেখানে যাচ্ছিলেন সোহেল মাহমুদ। এসময় ম্যানহাটনের বিস্ফোরণ, সন্দেহভাজনকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিতকরণ ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। 

নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ

সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আকায়েদের বাংলাদেশি পরিচয় নিশ্চিত করেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। এ ঘটনা জানার পর থেকে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে কমিউনিটিতে। এ ধরনের ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।  আর সে যেহেতু ট্যাক্সিচালক ছিল, তাই এখানকার ট্যাক্সিচালকদের মধ্যে আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজব; যারা এ পেশায় জড়িত আছেন তারা সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  এটি আসলেই ভীতিকর পরিস্থিতি।  এখানে বাংলাদেশের কমিউনিটি আছে, সন্দীপের কমিউনিটি আছে, সবার মাঝেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। আসলেই কী ঘটলো এটা!’ 

এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটি অপবাদের মুখে পড়বে বলে মনে করেন সোহেল মাহমুদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের জন্য বড় ধরনের স্ট্যাম্পিং হয়ে গেল। আপনি হয়তো জানবেন যে, এখানে ট্রাম্প এসে প্রথম যে নিষেধাজ্ঞা চালু করেছিল, নানা কারণে আদালত সেটি রিজেক্ট করে দিয়েছিল। পরে এটাকে পাল্টে আবারও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আনছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের নাম আসবে বলে শুনছিলাম আমরা। এ ধরনের ঘটনায় সেসব গুজব আরও শক্ত হয়ে যায়।’ 

ম্যানহাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা


বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক আকায়েদের বাড়ি  চট্টগ্রামের সন্দীপে কিনা জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আকায়েদ যে বাংলাদেশি পুলিশ তা নিশ্চিত করেছে।। তার কাছে থাকা পাসপোর্ট বা অন্যান্য ডকুমেন্টস থেকে নিশ্চই এ তথ্য জেনেছে পুলিশ।  সেসব ডকুমেন্টসেই আছে যে, সে কোথায় থেকে এসেছে। কিন্তু পুলিশ এখন নিশ্চিত হতে চাইছে যে, ব্রুকলিনে সে (আকায়েদ) কাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বা ঘোরাঘুরি করেছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর স্থানীয় গণমাধ্যম দাবি করছে,  আকায়েদ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে, কথা বলেছে; এসব ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই তদন্তকারী সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।’ আকায়েদের সঙ্গে মকার কার যোগাযোগ ছিল তা জানতেই মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উঠেপড়ে লেগেছে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সময় সোমবার সকালে বিস্ফোরণের ঘটনার পর দুপুরের দিকে ব্রুকলিনের ইস্ট সেকেন্ডের ১১০ নম্বর বাড়ি থেকে আকায়েদের ভাইকে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  এ ব্যাপারে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘পুলিশ আজকে সকালে এসে বাড়িটি ঘেরাও করে। পরে তার (আকায়েদের) ভাইকে তুলে নিয়ে যায়।  বাংলাদেশি  নির্মাণকর্মীরা যারা তখন বাড়ির  পাশে কাজ করেছিলেন, তাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পারি ।’

বিস্ফোরণের ঘটনার সময় সোহেল মাহমুদ সেখান থেকে সাড়ে ১১ মাইল দূরে অবস্থান করছিলেন।  ট্রেন বা সাবওয়েতে সেখানে পৌঁছানো অল্প সময়ের ব্যাপার বলেও জানান তিনি।  বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ব্রুকলিনের অ্যাভিনিউ এম এবং ইস্ট-৪৮ অ্যাভিনিউ স্ট্রিটের দিকে যাচ্ছিলেন বলেও জানিয়েছেন এ প্রবাসী সাংবাদিক। সেখানেও পুলিশ বাড়ি ঘিরে রেখেছে। সে তথ্য সংগ্রহ করতেই তিনি ছুটছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক সোহেল মাহমুদের সাক্ষাৎকারের অডিও শুনতে নিচে ক্লিক করুন: 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো নিউ ইয়র্কেই থাকেন।ম্যানহাটনের ঘটনা থেকে তখন কতদূরে ছিলেন আপনি? এখন কতদূরে আছেন?

সোহেল মাহমুদ: আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে ম্যানহাটনের যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছে সেটা প্রায় সাড়ে ১১ মাইল দূরে। আর এখান থেকে ঘটনাস্থলে যাওয়াটা বেশি সময়ের ব্যাপার না। ট্রেনে বা সাবওয়েতে খুব সহজেই যাওয়া যায়।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কি সেখানে যাচ্ছেন এখন?

সোহেল মাহমুদ: আমি এখন ঘটনাস্থলে যাচ্ছি না। এখন ব্রুকলিনের অ্যাভিনিউ এম এবং ইস্ট-৪৮ এভিনিউ স্ট্রিটের যে বাড়িটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে, আমি সেখানে যাচ্ছি। এর আগে ইস্ট সেকেন্ডের ১১০ নম্বর বাড়ি থেকে আকায়েদের ভাইকে দুপুরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আকায়েদ তার বাবা-মা ও ভাই-বোনের সঙ্গে এ দেশে এসেছিল। তার এক ভাই সম্ভবত এখানেই থাকে, পুলিশ আজকে সকালে এসে তার ভাইকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশি  নির্মাণকর্মীরা যারা সেসময় ওই বাড়ির পাশে কাজ করেছিলেন, তারা আমাকে জানিয়েছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আমরা যতদূর জানতে পেরেছি যে চট্টগ্রামের দিকে তার বাড়ি, সন্দীপে তার বাড়ি- এটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে কিনা?

সোহেল মাহমুদ: ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশি’ পুলিশ এতটুকু নিশ্চিত করেছে। তবে নিশ্চয়ই তার পাসপোর্টে ঠিকানা আছে- সে কোথা থেকে এসেছে। অথবা তার ডকুমেন্টসে আছে- সে কোথা থেকে  এসেছে। তবে পুলিশের কাছে সেটা এখন সেকেন্ডারি বিষয় হয়ে গেছে, সেগুলো তারা প্রকাশ করবে কি করবে না। পুলিশের উদ্বৃতি দিয়ে এখানকার গণমাধ্যম বলছে যে, ব্রুকলিনে সে (আকায়েদ) বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে, কথা বলেছে। পুলিশ এখন  সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে, পুলিশ এখন সে তথ্য খুঁজছে। এটাই এখন পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় তদন্তকারী সংস্থা ঘোরাঘুরি করছে শুধুমাত্র বিষয়গুলি জানার জন্য যে- আকায়েদের সঙ্গে কার কার যোগাযোগ ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: উনি সেখানে তো ক্যাব চালাত,আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, আকায়েদ একজন ট্রাক্সি ড্রাইভার ছিল। বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজন তো অনেকেই সেখানে আছেন। তো এই ধরনের ঘটনায় তাদের তাদের মধ্যে কী ধরনের রি-অ্যাকশন হয়েছে?

সোহেল মাহমুদ: খুব খারাপ। এজন্য যে, এখানে শুধু হলুদ ট্যাক্সি বা সবুজ ট্যাক্সির বিষয় না; এখানে আরও একটি বিষয় আছে, নিউ ইয়র্কে লিমোজিন বা সাদা গাড়ি যেগুলোতে কোনও ট্যাক্সির সাইন থাকে না, এই ধরনের অসংখ্য গাড়ি এখানে চলে। এই ছেলেটা হলুদ ট্যাক্সি চালাতো না, এখানে ট্যাক্সির সাইন ছাড়া যে গাড়ি চলে সেগুলো সে চালাতো। তাকে এ কারণে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটি লাইসেন্স দেওয়া হয়। আর যেহেতু সে ট্যাক্সিচালক, সেই কারণে এখানকার ট্যাক্সিচালকদের মধ্যে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এখানে থাকা আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন যারা এ পেশায় জড়িত আছেন তারা সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এটি আসলেই একটি ভীতিকর পরিস্থিতি। এখানে বাংলাদেশের কমিউনিটি আছে, সন্দীপের কমিউনিটি আছে, সবার মাঝেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আসলেই কী ঘটলো এটা!  

বাংলা ট্রিবিউন:  এর মাধ্যমে বাংলাদেশি কমিউনিটি কোনও বিপর্যয় বা অপবাদের মুখোমুখি হতে পারে কিনা?

সোহেল মাহমুদ: অবশ্যই হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের স্ট্যাম্পিং হয়ে গেল। আপনি হয়তো জানবেন যে, এখানে ট্রাম্প এসে প্রথম যে নিষেধাজ্ঞা চালু করেছিল, নানা কারণে আদালত সেটি রিজেক্ট করে দিয়েছিল। পরে এটাকে পাল্টে আবার নতুন করে ট্রাম্প প্রশাসন আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা এনেছে, যেটাকে আমরা ট্রাভেল ব্যান বলি। আমরা শুনে আসছিলাম যে, সেই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের নাম আসবে। তো, এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন আসলে এই ধরনের যে আতঙ্ক, যে গুজব, সেগুলো আরও বেশি শক্ত হয়ে যায়।

আমি একটি তথ্য দিতে চা, এই ছেলেটা যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বা বলা হচ্ছে যে বোমা সেখানে বিস্ফোরিত হয়েছে সেটি আসলে খুব ম্যাসিভ কোনও কিছুই না।পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি হাতে বানানো এবং এটি বিস্ফোরণের ফলে ছেলেটা হাতে যে আঘাত পেয়েছে তাতে তার যে ইনজুরি হয়েছে তা মাইনর ইনজুরি। দিস ইজ সো ফানি! তবে এটি কমিউনিটিকে ভয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। যে তিনজন আহত হয়েছেন তারাও সামান্য আঘাত পেয়েছেন। তবে ঘটনা ছোট হলেও ইমপ্যাক্ট অনেক বেশি।

 

/এআর/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নদী ভাঙন রক্ষার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন
নদী ভাঙন রক্ষার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন
পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় প্রধান উপদেষ্টা
পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় প্রধান উপদেষ্টা
ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপটে বিশৃঙ্খল চট্টগ্রামের সড়ক, চলতি মাসে জব্দ ৩ হাজার
ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপটে বিশৃঙ্খল চট্টগ্রামের সড়ক, চলতি মাসে জব্দ ৩ হাজার
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
তরমুজের খোসা ত্বকে ঘষলে যেসব উপকার পাবেন
তরমুজের খোসা ত্বকে ঘষলে যেসব উপকার পাবেন
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
‘২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে ৭০ মামলার ভয় দেখায় ডিজিএফআই’
‘২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে ৭০ মামলার ভয় দেখায় ডিজিএফআই’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ