রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের অংশ হিসাবে চীন, জাপান, জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। আগামী ২০ ও ২১ নভেম্বর মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য আসেমভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তারা যোগ দেবেন। মিয়ানমার যাওয়ার আগে এই চার মন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গা বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জেনে নেবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর ঢাকা সফরের বিষয়টি মঙ্গলবার চূড়ান্ত করা হয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার ১৮ নভেম্বর এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো ১৯ নভেম্বর ঢাকায় আসবেন।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করছি। বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়াসহ মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো আসেম শীর্ষ সম্মেলনকে মাথায় রেখে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনও অবস্থান নেওয়া যায় কিনা, সেটি বিবেচনা করছে।
এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম থেকেই ইউরোপের দেশগুলো রোহিঙ্গা বিষয়ে সোচ্চার। ওই সব দেশের সরকার রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে বাংলাদেশকে। একইসঙ্গে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপও দিচ্ছে।’ তিনি আও বলেন, ‘আমরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঈঙ্গিত পেয়েছি, তারা আসেমের মূল আলোচনায় এটি নিয়ে আলোচনা করতে না পারলেও অন্য আঙ্গিকে বিষয়টির অবতারণা করার চেষ্টা করবে।’
এর ফল কী হবে, জানতে চাইলে, সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘খোদ দেশটির রাজধানীতে ইউরোপের দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরব হলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অনেকগুণ বেড়ে যাবে।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটি ঠিক, আসেম সম্মেলনে অং সান সু চি প্রাধান্য পাবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার হাতে তেমন ক্ষমতা নেই। মিয়ানমারে এই সংকটে মূল সমস্যা তৈরি করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এই চাপ তারাও অনুভব করবে।’
এদিকে ১৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সোচ্চার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রাখাইনে গণহত্যা বন্ধের জন্য অং সান সুচি ও মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ মিং আন হ্লাংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি আগামী ১৫ নভেম্বর এ বিষয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমার সফর করবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও কংগ্রেসে মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ সংক্রান্ত দু’টি বিল তোলা হয়েছে।’ এই সিনেট প্রতিনিধি দলের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান।
যুক্তরাজ্যের রাজ পরিবারের একজন সদস্য রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য এ মাসেই কক্সবাজার সফর করবেন। এছাড়া কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী মারি ক্লদ বিবু আগামী ২১ নভেম্বর ঢাকা সফর করবেন।