আসামের বারপেতা জেলার সারুহারিদ গ্রামটি স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ফৌজি গাঁ (সেনা সদস্যদের গ্রাম) হিসেবে। প্রায় দুইশো পরিবারের এই গ্রাম থেকে ভারতের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২০ জন। অপ্রত্যাশিতভাবে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়ে তাদের অনেকেই এখন পরিচয় সংকটে ভুগছেন। এমনকী কারগিল যুদ্ধে অংশ নেওয়া এক সেনাসদস্যের দুই ভাইও (তারাও সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীতে কর্মরত) এনআরসি তালিকায় স্থান পাননি। তারা নিজেরাও সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীতে কর্মরত। এনআরসিতে না থাকা সেনাদের প্রশ্ন: শত্রু সামলাবো নাকি নাগরিকত্বের প্রমাণ দেব।
৩১ আগস্ট (শনিবার) স্থানীয় সময় সকাল দশটায় অনলাইনে ও এনআরসি সেবাকেন্দ্রে প্রকাশিত হয় আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। এ থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। বাদ পড়া ব্যক্তিরা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিলের সুযোগ পেলেও তাদের মধ্যে জেঁকে বসেছে বিদেশি ঘোষিত হওয়ার শঙ্কা।
একই ধরনের শঙ্কায় পড়েছে সাইদুল ইসলামের পরিবার। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুবেদার হিসেবে কারগিল যুদ্ধে লড়েছেন তিনি। সৌভাগ্যক্রমে এনআরসিতে স্থানও পেয়ছেন। তবে সেনাবাহিনীতে কর্মরত তার আরেক ভাই দিলবার হোসেন চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা অনুসারে ভারতীয় নাগরিকত্বের অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। একইভাবে বাদ পড়েছেন কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীতে (সিআইএসএফ) কর্মরত তাদের ছোটভাই মিজানুর আলী। দিলবার হোসেন বলেন, ‘আমরা শত্রুর সঙ্গে লড়াই করি। কিন্তু চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর আমরা গভীর মর্মাহত। আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান কিন্তু এখানে বাড়িতে এসে আমাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে লড়াই করতে হচ্ছে’।
চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবরে বিস্মিত হয়ে যান সিআইএসএফ-এর জওয়ান মিজানুর। ‘যাচাইয়ের সময় তারা আমাকে অনুপ্রবেশকারী বলেছিল আর বলেছিল আমি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমার বড় ভাই ১৯৯৩ সালে ভারতের সেনাবাহিনীতে কমিশন পেলে এটা কিভাবে সম্ভব? এমনকি আমি যখন সিআইএসএফ-এ যোগ দেই তখন আমার প্রার্থীতা যাচাই করেছিলেন জেলা পুলিশ সুপার’।
মিজানুর ও দিলবারের মতো আজিত আলীও বুঝতে পারছেন না কিভাবে তিনি চূড়ান্ত এনআরসি থেকে বাদ পড়লেন। আজিতও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য। এনআরসি’র প্রথম ও দ্বিতীয় খসড়া থেকেও বাদ পড়েছিলেন তিনি আর এবার চূড়ান্ত তালিকাতেও একই ঘটনা ঘটলো। তিনি বলেন বাড়ির সবাই খুব উদ্বিগ্ন। ‘চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর পরিবারের কেউই এনিয়ে কথা বলেনি কিন্তু ভেতরে ভেতরে সবাই জ্বলে যাচ্ছে। গতকাল বাবা কাঁদছিল। ভাবছি আমাদের যখন প্রায় বিদেশি ঘোষণা করা হয়েই গেছে তখন বেঁচে থেকে লাভ কি? কি করবো? সীমান্তে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করবো নাকি বাড়ি ফিরে গিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবো’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন এসব জওয়ানরা গ্রামের গর্ব আর এই বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার। বাবুল খান নামের একজন বলেন, ‘এটা সেনাসদস্যদের গ্রাম। আমরা জানি না কেন তাদের নাম বাদ পড়েছে। এখন তাদের জন্য সরকারের দ্রুত কিছু করা উচিত’।