যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম চালু রেখে সম্ভাব্য শাটডাউন এড়াতে প্রতিনিধি পরিষদে একটি সমঝোতা হয়েছে। সর্বদলীয় ওই সমঝোতার বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে এতে ১ দশমিক ৩৭৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তির কথা বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ৮৮ কিলোমিটার বেষ্টনী তৈরি সম্ভব হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকারও বেশি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
এর আওতায় সীমান্তের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি করা হবে।এতে অভিবাসীদের বৈধতা যাচাই সহজ হবে। এছাড়া এ বরাদ্দের আওতায় আরও অধিক সংখ্যায় কাস্টমস কর্মকর্তা নিয়োগ ও মানবাধিকার খাতে অর্থ খরচের সুযোগ তৈরি হবে।
গত কয়েকমাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার খরচ বাবদ ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৫৭০ কোটি ডলার বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ওই বরাদ্দ অর্থহীন বলে ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতার তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে গত বছরের শেষভাগে এসে কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ বরাদ্দ আটকে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম সময়ের জন্য শাটডাউন বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম আংশিক সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। পরে সীমান্ত দেয়ালের অর্থ বরাদ্দের সমঝোতা চুক্তির শর্তে তিন সপ্তাহের জন্য ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শাটডাউন থামিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম সাময়িকভাবে চালু হয়।
এখন সেই চুক্তির বিষয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সমঝোতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিস্তারিত না জানালেও ওই সমঝোতা আলোচনায় অংশ নেওয়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর প্যাট্রিক লিহি বলেন, আমরা সবাই যা চাই ঠিক তা-ই পাই এমন নয়। কেউই এমনটা পায় না। আমরা এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি যা আমেরিকার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে দাবি অনড় থেকে শাটডাউনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন, সে চুক্তি হয়নি। যা হয়েছে সেই চুক্তিতে তিনি স্বাক্ষর করবেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে রিপাবলিকান সিনেটর রিচার্ড শেলবি, যিনি সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স কমিটির নেতৃত্ব দেন; তার বিশ্বাস, এই সমঝোতায় প্রেসিডেন্টের সমর্থন রয়েছে।
সমঝোতা আলোচনায় অংশ নেওয়া রিপাবলিকান সিনেটর শেলে মুর ক্যাপিটো বলেন, তিনি আশাবাদী যে এই সমঝোতাই চূড়ান্ত হবে।
রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান কে গ্রেঞ্জার বলেন, সবাই বলেছি, আমরা শাটডাউন চাই না। আমরা একটি সমঝোতায় আসতে চাই। দেশের জন্যে ভালো হয় এমন সমঝোতায় আসতে চাই। আমরা এজন্য একসঙ্গে কাজ করেছি। আমার ধারণা সবাই বলবেন ভালো হয়েছে।
মার্ক মিডোস এর মতো বেশ কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা অবশ্য একে একটি দুর্বল সমঝোতা মনে করছেন। মিডোস বলেন, কংগ্রেস ঠিকমত কাজ করছে না।
তিন সপ্তাহ বা ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শাটডাউন তুলে নেয়ার সময়সীমা শেষ হচ্ছে শুক্রবার। অর্থাৎ হোয়াইট হাউস এবং আইনপ্রনেতাদের হাতে সময় রয়েছে শুক্রবার পর্যন্ত। তা না হলে আবারও কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের আংশিক সাময়িক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের ভারপ্রাপ্ত চিফ অব স্টাফ মিক মালভেনি এনবিসি নিউজ’কে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি সীমান্ত দেয়ালের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পান; তাহলে তিনি হয়তো তার মত মদলাতে পারেন, যা ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সীমান্ত দেয়াল প্রকল্পের কিছুটা নমুনা দেখা যায় সানদিয়াগো সীমান্তে। ৫ মিটার উচু বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে সেখানে। বর্ডার পেট্রোল এজেন্ট টিকায়ে মাইকেলের ভাষায়, ‘এটা একটি সি থ্রু বেষ্টনী। সানদিয়াগো’র কয়েকটি স্থানে মাত্র করা হয়েছে। এর ফলে আমরা অর্থাৎ বর্ডার পেট্রোল এজেন্টরা দেখতে পাবো ওই পাশে কি আছে, কি হচ্ছে। ফলে আমরা আরও সতর্ক থাকতে পারবো।’
টেক্সাসে বসবারত বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মেহনাজ মোমেন বলেন, তিনি আশাবাদী যে আরেকটি শাটডাউন হবে না। তবে দেয়াল নির্মাণ বিষয়টি রাজনীতি এবং তা ২০২০ সাল পর্যন্ত গড়াবে। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা।