দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ফের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটের কারণে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম রবিবারের মতো সোমবারও তার কার্যালয়ে আসেননি। এদিকে দিনভর ধর্মঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির থাকলেও তা উপেক্ষা করে বেশ কয়েকটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ধর্মঘট শেষে বিকাল পৌনে চারটার দিকে পুরাতন প্রশাসনিক ভবন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনরতরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনরতরা। সমাবেশ শেষে ফের মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আরও একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘প্রশাসন বার বার বলার চেষ্টা করছেন গুটিকয়েক শিক্ষার্থী আন্দোলন করছেন। আপনাদের যদি নৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় থাকে তাহলে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম নিজ পদে থাকতে পারেন কিনা সে মর্মে একটা গণভোটের আয়োজন করুন। আজকের ধর্মঘটে ফারজানা ইসলামপন্থী কিছু শিক্ষক সুবিধাপন্থী হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করেছেন। আমরা এ ধরনের অপচেষ্টার ধিক্কার জানাই।’
আন্দোলনরত পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। নৈতিক ও যৌক্তিক এই আন্দোলনকে বানচালের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ছাড়া কোনও শিক্ষক-শিক্ষার্থীই চায় না তাদের অভিভাবক (উপাচার্য) দুর্নীতিগ্রস্ত হোক। এজন্যই উপাচার্যের অপসারণ জরুরি।’
এরআগে, সকাল আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবন এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের প্রবেশ ফটক আটকে অবস্থান নেন আন্দোলনরতরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে না পারায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এদিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আন্দোলনরতদের বাধার মুখে পড়েন। বিভাগগুলোতে অধিকাংশ পূর্ব নির্ধারিত ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), গণিত, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, প্রত্নতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দর্শন, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ধর্মঘটের মুখে নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনে প্রবেশ করতে না পেরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে একটি অনুশীলনী পরীক্ষা নেন ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আরিফা সুলতানা।
এদিকে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মিলিত মঞ্চ ‘অন্যায়ের বিপক্ষে ও উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’। বিকালে ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জুয়েল রানা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলনরতদের লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।