X
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৭ কোটি টাকার অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে

রাজশাহী প্রতিনিধি
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২৬আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৩৫

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রায় সাত কোটি টাকা অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোটেশনের মাধ্যমে কেনাকাটা এবং আম বাগান ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু বিষয়ে অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।  

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর বরেন্দ্র ভবনে অভিযান পরিচালনা শেষে দুদক রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন এ তথ্য জানান। এর আগে দুদকের তিন সদস্যের একটি টিম রাজশাহীতে বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ে যান। দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা বিএমডিএ’র ২৪টি শাখার প্রায় প্রতিটিতেই ঢুঁ মারেন। খতিয়ে দেখেন নথিপত্র। এসময় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ উপস্থিত না থাকায় তারা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হক ও  অডিট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বাসুদেব চন্দ্র মহন্তসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন ও বাণিজ্যিক অডিটের কাগজপত্র দেখেন।

দুপুরে অনুসন্ধান শেষে দলের প্রধান রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, ‘বিএমডিএতে আমরা প্রায় সাত কোটি টাকা অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছি। কোটেশনের মাধ্যমে কেনাকাটা এবং আম বাগান ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভয়াবহ অনিয়ম রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু বিষয়ে অনিয়ম ধরা পড়েছে। আমরা বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেবো। এরপর সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রধান কার্যালয় মামলা করতে বললে তাও করা হবে।’

জানা গেছে, বিএমডিএ’র অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদকের উপ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মাসুদুর রহমান বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক আদেশে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালককে তদন্ত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেন। এ আদেশের পরদিনই দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম বিএমডিএ’তে অনুসন্ধানে যায়।

বিএমডিএ’র ২৪টি খাতে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের বাণিজ্যিক অডিটে ছয় কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৯ টাকার অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিএমডিএ’র জোন পর্যায়ে ভবনের তৃতীয় তলা সহকারী প্রকৌশলীদের আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হলেও তা বরাদ্দ না দিয়ে ফেলে রাখার ফলে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৩ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে কর্মকর্তাদের টাইমস্কেলে বেতন নির্ধারণের সময় অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট হিসেবে প্রদানকৃত অর্থ আদায় না করায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৯ টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ কিনে সেটি আবাসিক বাসায় সরবরাহের ফলে ক্ষতি হয়েছে তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৭ টাকা। মেটাল ফাউন্ডারি ইন্ডাস্ট্রিজের বিল থেকে প্রযোজ্য হারের চেয়ে কম হারে ভ্যাট কাটায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তিন লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৫ টাকা। বিলম্বে কাজ সম্পাদন করার পরেও ঠিকাদারের বিল থেকে বিলম্ব ফি কর্তন না করায় ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৩ টাকা। পার্টিসিপেশন ফি এর ওপর প্রযোজ্য মূসক সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৭ টাকা।

পুনরায় টেন্ডার আহ্বান না করে যোগসাজসের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে আমসহ ফলগাছ ইজারা দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৮৯৬ টাকা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এড়ানোর লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে খণ্ড খণ্ডভাবে ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৯২৫ টাকা। পিপিআর লঙ্ঘন করে সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে আর্থিক ক্ষমতার অতিরিক্ত মূল্যের পণ্য ক্রয় করে সংস্থার ক্ষতি করা হয়েছে ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ টাকা। পিপিআর লঙ্ঘন করে কোটেশনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৬ টাকার পণ্য ক্রয় এবং ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৯ টাকার কাজ করে সরকারি ক্ষতি করা হয়েছে এক কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৫ টাকা।

সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে ঠিকাদারকে ২০ ভাগ অতিরিক্ত কাজ দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৯৭০ টাকা। কোটেশনের শর্ত মোতাবেক যোগ্য দরদাতা না পাওয়া সত্ত্বেও কার্যাদেশ দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৯৭ টাকা। আবার বিধি লঙ্ঘন করে ঠিকাদারকে মূল ক্রয়ের অতিরিক্ত ২০ ভাগ পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারি ক্ষতি করা হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৮ টাকা। এভাবে সবমিলিয়ে ২৪টি খাতে পাঁচ বছরে সরকারের ছয় কোটি ৬৯ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাজ করতে গেলে অনিয়ম, অডিট আপত্তি উঠবে। আবার সেসব নিষ্পত্তিও হবে। তবে কোনও অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’

 

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘বিশেষ কিছু’ অর্জন করে উচ্ছ্বসিত ফাহিমা-সুমনা
‘বিশেষ কিছু’ অর্জন করে উচ্ছ্বসিত ফাহিমা-সুমনা
সেঞ্চুরি নয়, দলের কথাই মাথায় ছিল জ্যোতির
সেঞ্চুরি নয়, দলের কথাই মাথায় ছিল জ্যোতির
আইএস-আল কায়েদার পতাকা নিয়ে মিছিল, ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি
আইএস-আল কায়েদার পতাকা নিয়ে মিছিল, ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি
দ্য লাইব্রেরি অফ ব্যাবেল ।। হোর্হে লুইস বোর্হেস
দ্য লাইব্রেরি অফ ব্যাবেল ।। হোর্হে লুইস বোর্হেস
সর্বাধিক পঠিত
ধর্ষণের ব্যথা সইতে না পেরে আল আমিনকে হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তি: পিবিআই
ধর্ষণের ব্যথা সইতে না পেরে আল আমিনকে হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তি: পিবিআই
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর রফতানি করা ৪ ট্রাক পণ্য ফেরত পাঠালো ভারত
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর রফতানি করা ৪ ট্রাক পণ্য ফেরত পাঠালো ভারত
মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর ধর্মাচার: হেফাজত
মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর ধর্মাচার: হেফাজত
৭ দিনের মধ্যে বাঁধ রিপেয়ার না করলে আপনারে রিপেয়ার করে দিমু, প্রকৌশলীকে উপদেষ্টা
৭ দিনের মধ্যে বাঁধ রিপেয়ার না করলে আপনারে রিপেয়ার করে দিমু, প্রকৌশলীকে উপদেষ্টা
ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আবছার আটক
ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আবছার আটক