রাজবাড়ীতে পদ্মায় তীব্র স্রোতের জন্য নদী ভাঙন বেড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ধল্লাপাড়া ও দেবগ্রাম ইউপির কাউয়াজানি,মুন্সিপাড়া গ্রামের কয়েক‘শ একর ফসলি জমি ও বসতি ভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে দু’টি ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট,বাজার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,কবরস্থানসহ শত শত বসতবাড়ি।
স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত নদী ভাঙন ঠেকাতে না পারলে সবচেয়ে বেশি হুমকিতে পড়বে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগে নদী তীরে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। তবে জিও ব্যাগ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউপির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে দু’টি প্যাকেজের মাধ্যমে ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। গোয়ালন্দ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের তিনটিই ভাঙন কবলিত। ভাঙনে এরইমধ্যে শত শত একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বেপারীপাড়া গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, ‘নদী যেভাবে ভাঙছে এভাবে আর কয়েকদিন ভাঙলে নদীর স্রোতে সরাসরি আঘাত করবে ঘাট এলাকায়। তখন লঞ্চ ও ফেরি ঘাট হুমকিতে পড়বে।’
৭৫ বছর বয়সী তাইজুদ্দিন শেখ বলেন, ‘আমার জীবনে তিনবার নদী ভাঙনে জমি ভিটে মাটি সব হারিয়েছি। এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। সম্পদ বলতে আর কিছু নাই। অন্যের জমিতে থাকি। ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না।’
দেবগ্রাম ইউনিয়নের ফুলবানু বেগম বলেন, ‘নদী প্রতিবছর ভাঙে আর বালির বস্তা ফেলে। এতে তো কোনও লাভ হয় না। বালির বস্তা ফেলে আর স্রোতে তা ভেসে যায়। আমরা কারও কাছে চাল-ডাল চাই না। আমাদের দাবি নদী শাসন করা হোক। যেন আর নদীতে আমাদের জমি বিলীন না হয়।’
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আমি আছি। ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ শাখার (পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ সরকার জানান,পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার ব্যাগ এখানে ডাম্পিং করা হবে। ভাঙস বাড়লে কাজের পরিধি আরও বাড়াবো। এভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে পারলে ভাঙন রোধ করা যাবে।