X
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
২৮ চৈত্র ১৪৩১

‘খিরসাপাত’ পেলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনন্দ

আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:১০আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৮

খিরসাপাত আম (ছবি: প্রতিনিধি) ‘খিরসাপাত’ আম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই)পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ায় আনন্দ বইছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। খুশি সেখানকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। দেশের তৃতীয় জিআই পণ্য হিসেবে রবিবার নিবন্ধন পেলো ‘খিরসাপাত’। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাইরে এটি হিমসাগর নামেও পরিচিত। তবে এখন শুধু ‘খিরসাপাত’ নামেই বাজারজাত হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘জিআই সনদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্র্যান্ডিং হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘খিরসাপাত’ আম। পরে এই পরিচিতি দিয়ে মেধাসত্ত্বও পাওয়া যাবে। এতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হবে জেলার ‘খিরসাপাত’ আম। এখন থেকে এই আম অন্য নামে কেউ বাজারজাত করতে পারবে না এবং ক্রেতারাও প্রতারিত হবেন না।’

ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আরও মানসম্মতভাবে এই আমের উৎপাদন বাড়াতে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ এবং চাষিদের মাঝে সদনপত্র দেওয়া হবে।’ 

ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৩৫ হাজার মেট্রিক টন খিরসাপাত আম উৎপাদন হয়।

লোক সংস্কৃতির গবেষক প্রফেসর ড. মাজহারুল ইসলাম তরু বলেন,‘‘প্রাচীন লোক সংস্কৃতি ‘আলকাপ’ গানের ছড়ায় আড়াইশ জাতের আমের মধ্যে এই ‘খিরসাপাত’ আমের নাম রয়েছে। এছাড়া জেলার গেজেট অনুসন্ধানেও খিরসাপাত আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে উল্লেখ করা হয়।’’

খিরসাপাত আম (ছবি: প্রতিনিধি) কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এর ফলে দেশের বাজারে এই আমের চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও এই আমের উৎপাদন আরও বাড়বে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ‘খিরসাপাত আম জিআই সনদ পাওয়ায় এখন থেকে বাজারজাতের সময় আমের গায়ে ট্যাগ লাগানো থাকবে। ক্রেতারাও আমটি চিনতে পারবেন। এতে অন্য আম আর বাজারে চালিয়ে দিতে পারবে না। চাষিরাও মূল্য পাবেন, আমের রাজ্যে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। এভাবে খিরসাপাত আমের একটি ব্র্যান্ডিং হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের আমের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে জেলা প্রশসক এ জেড এম নুরুল হক বলেন,‘খিরসাপাত আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এ আমের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সম্প্রসারণ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। অনেক দিনের চাওয়া ছিল জেলাবাসীর। এর ফলে জেলার উন্নয়নে এটি মাইলফলক হবে।’ সরকার ও পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরকে কৃতজ্ঞতা জানান জেলা প্রশাসক।

রবিবার সকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন এই সনদ দেন। সনদপত্র গ্রহণ করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (গাজীপুর) পরিচালক ড. মোদন গোপাল সাহা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের অনুকূলে নিবন্ধন সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)।

খিরসাপাত আম (ছবি: প্রতিনিধি) চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়ইশ জাতের আমের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ও জনপ্রিয় জাত হচ্ছে এই ‘খিরসাপাত’। জেলার বাইরে এই আম হিমসাগর নামেও পরিচিত। মাঝারি আকারের এবং অনেকটা ডিম্বাকৃতির এই আম লম্বায় গড়ে ৮.৬ সে. মি. এবং ওজন আড়াইশ গ্রাম থেকে সাড়ে তিনশ গ্রাম। পাকা আমের ত্বকের রঙ সামান্য হলদে এবং শাঁসের রঙ হলুদাভ। শাঁস ও আঁশবিহীন, রসাল, আকর্ষণীয় গন্ধ ও গড় মিষ্টতা ২৩ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র জানায়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া সুস্বাদু জাতের এই আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে গত চার বছর ধরে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানিও হচ্ছে। তাই আমচাষি, বাগানমালিক, আমব্যবসায়ী ও সংগঠনগুলো ‘খিরসাপাত আম’কে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। পরে এই আমের স্বত্ব সুরক্ষার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘খিরসাপাত, ন্যাংড়া ও আশ্বিনা আমকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়। আর এই তিন জাতের আমের মধ্যে ‘খিরসাপাত’ আমকেই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্কস অধিদফতর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র জানায়, শুরুটা প্রায় ২শ বছর আগে। ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গড়ে তোলেন একটি আমবাগান। সেই বাগানেই অন্যান্য উৎকৃষ্ট জাতের আমের সঙ্গে চাষ হতো খিরসাপাত আম। এছাড়া ১৯৫৫ সালে স্থানীয় লোকসংগীত আলকাপ গানের বন্দনা ছড়ায় উল্লেখ রয়েছে খিরসাপাত আমের কথা। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু এই জাতটি।  


আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো খিরসাপাত আম

 

 

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ছাত্র ফেডারেশনের শ্রদ্ধা
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ছাত্র ফেডারেশনের শ্রদ্ধা
জাতীয় রাজনীতি: কোন দিকে যাচ্ছে?
জাতীয় রাজনীতি: কোন দিকে যাচ্ছে?
কিছু কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন
কিছু কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন
কানাডার সামিত খেলবেন বাংলাদেশ দলে!
কানাডার সামিত খেলবেন বাংলাদেশ দলে!
সর্বাধিক পঠিত
আইএস-আল কায়েদার পতাকা নিয়ে মিছিল, ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি
আইএস-আল কায়েদার পতাকা নিয়ে মিছিল, ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি
ইলিশের কেজি দুই-তিন হাজার, বৈশাখ ঘিরে নেই অর্ডার
বরিশালের ইলিশ মোকামইলিশের কেজি দুই-তিন হাজার, বৈশাখ ঘিরে নেই অর্ডার
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন 
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন 
শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেত্রী বহিষ্কার, পুলিশে সোপর্দ
শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেত্রী বহিষ্কার, পুলিশে সোপর্দ
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে ডিএমডি পদে ৯ জনের পদোন্নতি
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে ডিএমডি পদে ৯ জনের পদোন্নতি