X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

রাজশাহীতে প্রায় সব আসনেই লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষে

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১৭আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২৯

রাজশাহীর বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা রাজশাহীর ছয়টি আসন থেকে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ২৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে দু-একটি আসন বাদে অন্যগুলোয় লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে। রাজশাহী-৫ ও ৬ আসনের ঐক্যফ্রন্টের দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় মহাজোটের প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে অনেকটা এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন স্থানীরা।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর): এই আসনে এবার চারজন প্রার্থী লড়াই করছেন। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী, বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আমিনুল হকের মধ্যে। এ আসন থেকে এর আগে ওমর ফারুক চৌধুরী দুইবার এবং আমিনুল হক তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। গণসংযোগকালে ওমর ফারুক বলেছেন, জঙ্গিবাদের মদদদাতা ব্যারিস্টার আমিনুল হককে ভোটাররা প্রত্যাখান করে এলাকার উন্নয়ন এগিয়ে নিতে এবারও নৌকার ভোট দেওয়ার আহ্বান।

রাজশাহী-১ আসনের আ. লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা

আর আমিনুল হক বলেছেন, গোদাগাড়ী-তানোর এলাকার যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে তার মেয়াদে। তাই তার উন্নয়ন দেখে ভোটাররা এবার ধানের শীষে ভোট দিয়ে তাকে আবার জয়ী করবে।

এই আসনের অন্য দুই প্রার্থীরা হচ্ছেন, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মান্নান ও বাসদের আলফাজ হোসেন।

রাজশাহী-২ (সদর): এই আসনেও নির্বাচন করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তবে প্রথম থেকেই সমানতালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মহাজোট প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। আর অন্য দুইজন হলেন ইসলামী আন্দোলনের ফয়সাল হোসেন ও সিপিবির এনামুল হক। তবে বাদশা ও মিনুর চেয়ে  ফয়সাল ও এনামুল হক অনেক পিছিয়ে আছে। এতে করে সদর আসনেও বাদশার নৌকা ও মিনুর ধানের শীষ প্রতীকে তীব্র লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদের মধ্যে বাদশা দুইবার এবং মিনু একবার এ আসন থেকে এমপি হয়েছেন। আবার মিনু সাবেক মেয়রও ছিলেন।

রাজশাহী-২ আসনের আ. লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারে বাদশা বলছেন, ‘রাজশাহীতে যারা জঙ্গিবাদে মদদ দিয়েছে। যারা আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে তাদের ভোটাররা প্রত্যাখান করেছে। আর আমরা রাজশাহীর মানুষকে উন্নয়ন দিয়েছি। তাই ভোটাররা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। এখানেও নৌকার বিজয় অবশ্যই হবে।’ মিনু বলছেন, তার মেয়াদে করা হয়েছে রাজশাহীর সব উন্নয়ন। নতুন করে তেমন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। তাই এবারের ভোটে জয়যুক্ত করে নতুন করে রাজশাহী উন্নয়নের জন্য তাকে ফিরিয়ে আনবে। এজন্য ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর): এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী তরুণ সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে লড়ছেন নতুন মুখ ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। এই দুজনের মধ্যে প্রতিনদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম থেকে প্রচার ব্যস্ত রয়েছে তারা।

রাজশাহী-৩ আসনের আ. লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা গণসংযোগকালে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন বলেছেন, বহিরাগত কাউকে পবা-মোহনপুরের মানুষ ভোট দেবে না। স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে ভোটাররা তার পক্ষে রয়েছে এবং নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও তাকেই নির্বাচিত করবে।

মিলন বলেছেন, ‘ধানের শীষের জোয়ার দেখে নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজন বেপরোয়া হয়ে গেছে। তার প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ধানে শীষে ভোট দিয়ে তাকেই জয়ী করবে।’

আয়েন ও মিলন ছাড়াও এই আসনে প্রার্থী হয়ে আছেন সাম্যবাদী দল এমএলএলের সাজ্জাদ হোসেন, যুক্তফ্রন্টের (এলডিপি) মনিরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলনের ফজলুর রহমান।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা): এ আসনে এবার তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের এনামুল হক, বিএনপির আবু হেনা ও ইসলামী আন্দোলনের তাজুল ইসলাম খান। তবে স্থানীয়দের অভিমত এই আসনে এনামুল হক ও আবু হেনার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু জঙ্গিবাদ ইস্যু ও ১৪ বছর পর এলাকায় আসার কারণে প্রচারে নৌকার প্রার্থী এনামুলের চেয়ে পিছিয়ে আছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী আবু হেনা।

রাজশাহী-৪ আসনের আ. লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা

আবু হেনা ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নির্বাচনি প্রচারে  বিএনপির নেতাকর্মীদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। নানানভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এরপরও যদি প্রশাসন আমাদের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার সুযোগ পায়। তাহলে বিপুল ভোটে আমি জয়ী হবো।’

এনামুল হক বলেছেন, ‘অশান্ত বাগমারাকে শান্তির বাগমারায় পরিণত করা হয়েছে। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে নৌকায় ভোট দেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।’

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর): এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী নতুন মুখ চিকিৎসক মনসুর রহমান। আর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল। তবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রতীক বরাদ্দ পাননি। ঐক্যফ্রন্টের মূল প্রার্থী নাদিম মোস্তফা প্রথমে ভোটের প্রচার চালালেও গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার প্রতীক বাতিল এবং ২০ ডিসেম্বর তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে। এতে করে স্থানীয়দের অভিমত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নিয়ে জটিলতার কারণে জয়ের ব্যাপারে কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান।

নজরুল ইসলামের ছেলে ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক বলেছেন, তার পিতাকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য হাইকোটের আদেশের কপি ২০ ডিসেম্বর রিটানিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি অফিসিয়াল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ প্রক্রিয়া না করে রাখলে এ আসন বিএনপির প্রার্থী শূন্য থাকতো বলে দাবি করে ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পোস্টার ছাপানো হচ্ছে। চিঠি হাতে পাওয়ার পর প্রচার চালানো হবে। নাদিম মোস্তফা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুনসুরের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আমার মনোনয়নপত্র স্থগিত করেছেন। আর বিএনপির নজরুল ইসলাম মন্ডলের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ধানের শীষের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে আগামী রিট করবো। সেই অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে। যদি রিট করতে পারি তাহলে হবে, আর রিট করতে না পেলে হবে না।’

এসব বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম সাকলাইন বলেন, হঠাৎ করে উচ্চ আদালতের রায়ে নাদিম মোস্তফার প্রার্থিতা স্থগিত হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। বিগত ১০ বছর ধরে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখানে বিএনপি দলীয় প্রার্থী নাদিম মোস্তফাকে দল থেকে দেওয়া হয়েছে। এটা পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।

এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন, জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের রুহুল আমিন। তবে বিএনপির প্রার্থী জটিলতা থাকলে এই আসনে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হওয়ার মতো না। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা): এই আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদের মনোনয়ন স্থগিত হওয়ার খবরে নির্বাচনি এলাকার বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। ২০ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট চাঁদের মনোনয়ন স্থগিত করেন। ১০ বছর পর এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফলে এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য দলটির নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছেন। কিন্তু নিজ দলের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত হওয়ায় এ আসনের বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। এই আসনে বাছাইয়ের পরে মোট চারজন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিএনপির আবু সাঈদ চাঁদ, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুস সালাম। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে দলটির নেতাকর্মীরা ১১ ডিসেম্বর বাঘায় এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ভোটের আলোচনাতেই নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ফলে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী দুইবারের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

চাঁদের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ইউনুস আলী তালুকদার বলেন, তিনি গণমাধ্যমে দেখছেন, বিএনপির প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাঁদ যদি প্রার্থিতা আর ফিরে না পান, তাহলে এই আসনে বিএনপির আর ভোট দেওয়ার জায়গা থাকবে না। এই আসনে নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এলাকার ও দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিতা ধরে রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতি ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও রির্টানিং কর্মকর্তা এস এম আবদুল কাদের জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রার্থীদের অভিযোগ আসছে। সেগুলো তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, সুন্দর পরিবেশে রাজশাহীতে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট হবে।

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সংস্কার করতে আর কত সময় লাগবে আপনাদের, প্রশ্ন রিজভীর
সংস্কার করতে আর কত সময় লাগবে আপনাদের, প্রশ্ন রিজভীর
অফিস সময়ে সভার জন্য সম্মানী না নেওয়ার নির্দেশ
অফিস সময়ে সভার জন্য সম্মানী না নেওয়ার নির্দেশ
কুমিল্লায় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
কুমিল্লায় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে: পার্বত্য উপদেষ্টা
খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে: পার্বত্য উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
চীনের অর্থনীতি আবারও চমকে দিলো বিশ্বকে
চীনের অর্থনীতি আবারও চমকে দিলো বিশ্বকে
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: বাংলাদেশকে আবারও সতর্ক করলো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: বাংলাদেশকে আবারও সতর্ক করলো ভারত